অতিমারি করোনার হাত থেকে বাঁচতে কোভ্যাকসিন ও কোভিশিল্ড নামক এই দুটি ভ্যাকসিন নিতে কার্যত হিড়িক পড়েছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে, শরীরে যাতে কোনওভাবেই করোনার জীবাণু থাবা বসাতে না পারে তাই করোনা টিকার পরপর দুটো ডোজই নিয়েছিলেন দেশবাসী। কিন্তু করোনার সেই টিকা কি আদৌ নিরাপদ ছিল, উঠে গেল প্রশ্ন। অভিযোগ উঠেছে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে । ২০২১ সালের এপ্রিলে টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’ নেন ব্রিটেনের এক মহিলা ও ভ্যাকসিন নেওয়ার পর থেকেই ওই মহিলা স্নায়ু রোগের শিকার হয়। এমনকি তাঁর মস্তিস্কে রক্ত জমাট বাঁধতেও শুরু করে বলে অভিযোগ।
এই ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থার বিরুদ্ধে ৫০ টি মামলা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সংস্থা দাবি করেছিল, তাঁদের তৈরি ভ্যাকসিনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তা তারা বিশ্বাস করেন না। কিন্তু, সম্প্রতি ব্রিটেনের এক কোর্টে অ্যাস্ট্রোজেনেকা জানিয়েছে, খুব বিরল হলেও তাদের ভ্যাকসিনে টিটিএস হতে পারে। এই বিরল সিনড্রম হলে রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং রক্তের প্লেটলেটও কমে যায়।
সূত্রের খবর, ঘটনার দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে অক্সফোর্ট-অ্যাস্ট্রোজেনেকা স্বীকার করে তাদের তৈরি কোভিশিল্ডের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা। তবে আদালতে অ্যাস্ট্রোজেনেকা দাবি করেছে, এই ভ্যাকসিন না নিলেও কোনও ব্যক্তির থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড়্রোম হতে পারে। তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেই এই সিন্ড়্রোম শুরু হচ্ছে কিনা, এটাও বলা ঠিক নয়। পাশাপাশি, আদালতকে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা জানিয়েছে, অতিমারি করোনাকে রুখতে এই ভ্যাকসিন ভীষণ কার্যকারি। কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই বিরল। ভ্যাকসিন বিভিন্ন রকমভাবে ট্রায়াল করা হয়েছে। মান্যতা পাওয়ার পর, তবেই দেশবাসীকে ভ্যাকসিনের মান্যতা পেয়েছে।
উল্লেখ্য, সালটা ২০২০, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস গ্রাস করেছিল গোটা বিশ্বকে। বিশ্ব জুড়ে ছিল কেবলই হাহাকার ও অব্যাহত ছিল মৃত্যু মিছিল। এই ভাইরাসের উপসর্গ ছিল জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, জিভে স্বাদ না পাওয়া ইত্যাদি। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার মুহুর্তেই সবার আগেই সংক্রমিত করে শ্বাসনালীকে। ফলে সংক্রমণকারীর ব্যাপকভাবে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। শুধু তাই নয়, রুচিও থাকে না খাবারে। এমনকি একের পর এক অঙ্গকে অকেজো করে দিতে সক্ষম এই প্রাণঘাতী ভাইরাস।
ফলে দুর্বল শরীর অনায়াসেই ঢলে পড়ে মৃত্যুর মুখে। করোনার গ্রাসের হাত থেকে জনগণকে বাঁচাতে বিশ্বজুড়ে লাগু হয়েছিল লকডাউন। স্তব্ধ হয়েছিল জনজীবন, বন্ধ ছিল দোকানপাট। চারিদিকে কেবলই হাহাকার আর আর্তনাদ। সেই সময় এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে বিশ্ববাসীকে বাঁচাতে এবং করোনাকে কবজা করতে ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। সর্বপ্রথম ভারতেই তৈরি হল কোভিশিল্ড ও কো-ভ্যাকসিনের মতো করোনা দমনকারী টিকা।
এই কোভিশিল্ড তৈরি করেছিল অক্সফোর্ড ও অ্যস্ট্রোজেনেকা এবং কো-ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল ভারত বায়োটেক। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষার পর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এসে পৌঁছায় এই ভ্যাকসিনগুলি। একইসঙ্গে, ভয়াবহ অতিমারির হাত থেকে দেশ তথা বিশ্ববাসীকে বাঁচাতে এক সপ্তাহ না যেতেই কোভিড-১৯–এর লাখ লাখ ডোজ টিকা প্রতিবেশী কয়েকটি দেশকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিল ভারত।
Discussion about this post