বাংলা সিনেমায় একটা দুরন্ত ডায়লগ রয়েছে, “এক ছোবলেই ছবি”। অনেকটা সেই ধরণের বেশ কয়েকটি যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করেছ ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। যদিও ডিআরডিও-র গবেষকরা যুদ্ধাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, বা অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করেই ক্ষান্ত থাকেন না, তাঁরা সেগুলি আরও সময়োপযোগী এবং আধুনিক করে তুলতে নিরলস পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যান। ২০২৪ সালের শেষ লগ্নে এসে ডিআরডিও এমনই দুটি যুদ্ধাস্ত্র আপগ্রেড করেছে, যা আগামীদিনে গেমচেঞ্জার হতে চলেছে ভারতের জন্য। বিশেষ করে এই দুটির জন্য চিন, পাকিস্তানের মতো দেশের রাতের ঘুম উড়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসেই ভারত ওড়িশা উপকূলে তার প্রথম দূরপাল্লার হাইপারসনিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা করেছে। এই ধরণের হাইপারসনিক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেবলমাত্র আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের হাতে ছিল, এবার বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের হাতেও চলে এল। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রকে পরিভাষায় বলা হয়, লং রেঞ্জ এয়ার লঞ্চড সারফেস মিসাইল। যার পাল্লা দেড় হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। যেহেতু এই মিসাইলগুলি হাইপারসনিক, তাই এর গতিবেগ শব্দের গতির পাঁচগুণ পর্যন্ত হয়। অর্থাৎ ম্যাক-ফাইভ প্রযুক্তির মিসাইল। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার ওয়েবসাইটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হাইপারসনিক প্রযুক্তির মিসাইল চিন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের বহু শহরকে শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ দ্রুততার সঙ্গে আঘাত হানতে পারে।
এটির গতিবেগ এই ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রকে শত্রুপক্ষের নজরদারি থেকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম। অর্থাৎ শত্রুপক্ষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে পারে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি যেমন আঘাত হানতে পারে, তেমনই দেশের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকেও নিশ্চয়তা দেয়। ভারত ইতিমধ্যেই দেশে তৈরি ব্রহ্মোস লং রেঞ্জ সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। পাশাপাশি সারফেস টু এয়ার মিসাইল আকাশ, লং রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল অগ্নি, এয়ার টু এয়ার মিসাইল অস্ত্র এবং অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল নাগে পরীক্ষামূলকভাবে এই হাইব্রিড সুপারসনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে চলেছে।
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ডিআরডিও এবং গ্যাস টারবাইন রিসার্চ এস্টাব্লিশমেন্ট বা জিটিআরই যৌথ উদ্যোগে তৈরি করে ফেলেছে ভারতের প্রথম দেশীয় প্রযুক্তির ফাইটার জেট ইঞ্জিন। ইতিমধ্যেই সেই ইঞ্জিনের সাহায্যে একটি বিমান রাশিয়ায় ফ্লাইং টেস্ট বেডে পরীক্ষামূলকভাবে ওড়ানো হয়েছে। সূত্রের খবর, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তির প্রথম ফাইটার জেট ইঞ্জিনের নাম দেওয়া হয়েছে কাবেরী ইঞ্জিন। যা আগামীদিনে ভারতের জন্য গেমচেঞ্জার হতে চলেছে। এতদিন ভারত নিজেদের উদ্যোগে যুদ্ধবিমান তৈরি করলেও তার ইঞ্জিন বিদেশ থেকে আমদানি করতো। কিন্তু কাবেরী ইঞ্জিনের দৌলতে এবার সম্পূর্ণ রূপে ভারতেই তৈরি হবে ফাইটার জেট। জানা যাচ্ছে, নন-আটারবার্নিং কাভেরি ইঞ্জিন, ভারতের প্রথম স্টিলথ মনুষ্যবিহীন কমব্যাট এরিয়াল ভেহিকেল ঘটককে শক্তি দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ভারতের এই জেট ইঞ্জিন ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যাভিয়েশন মোটরসে ১৪০ ঘণ্টার ইনফ্লাইট পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ওই ইঞ্জিনের ৭০ ঘন্টা আকাশে ওড়ার বিশেষ পরীক্ষা চলছে।
কাবেরী ড্রাই ইঞ্জিনগুলি একটি পরিবর্তিত ইলিউশিন আই আই ৭৬ ফিক্সড-উইং টার্বোফ্যান বিমানের চারটি ইঞ্জিনকে প্রতিস্থাপিত করেছে। এই ইঞ্জিনের পরীক্ষা সফল হলে ভারত আগামীদিনে অত্যাধুনিক মনুষ্যবিহীন কমব্যাট এরিয়াল ভ্যাহিকেল তৈরি করবে। যা আগামীদিনের যুদ্ধে গেমচেঞ্জার হতে চলেছে। আশা করা যায়, ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে সমস্ত পরীক্ষা শেষ করে এবং ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে সীমিত সিরিজ উৎপাদন শুরু করবে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভারত দিনে দিনে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হচ্ছে। দেশীয় প্রযুক্তির কাবেরী জেট ইঞ্জিনের উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে শুরু হলে পাকিস্তান, চিন ও বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির রাতের ঘুম উড়বে। কারণ,পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কোনও হাইপারসনিক মিসাইল প্রযুক্তি নেই। চিনের যাও আছে কিন্তু ভারতের ছিল না। এবার ভারতও চিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম হয়ে উঠল। ফলে চিন বাধ্য হবে ভারতকে সমীহ করে চলতে।
Discussion about this post