গলায় আসল নরমুণ্ডের মালা, ভয়াল দর্শণ এই কালী মাতাকে ভয় পান পাকিস্তানের কট্টরপন্থী মৌলবাদীরাও। এমনিতেই মুসলিম দেশ পাকিস্তানে কালী মন্দির থাকাটাই খুব আশ্চর্যের। তবুও এক জাগ্রত কালী মন্দির রয়েছে পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের কালাট শহরে। যাকে কালাটেশ্বরী কালী মাতা বলে চেনেন পাকিস্তানবাসী। মুসলিমরাও এই মন্দিরের সামনে এসে মাথা নত করেন। কালাটেশ্বরী মন্দিরের বয়স নয় নয় করে ১৯৪৪ বছর হয়ে গেল।
পাকিস্তানের খণিজ সমৃদ্ধ বালুচিস্তান প্রদেশ। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত সতীপীঠ মরুতীর্থ হিংলাজ। যা পাকিস্তানে বিবি নানীর মন্দির নামে পরিচিত। এই প্রদেশের কালাট শহরে রয়েছে আরেক বিখ্যাত কালী তীর্থ। যার নাম কালাটেশ্বরী কালী মাতা মন্দির। মা এখানে এতটাই জাগ্রত যে যারা এই মন্দির লুট বা ধ্বংস করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তাঁদেরই অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে এমনটাই হয়ে এসেছে কট্টরপন্থী সংগঠনগুলির সঙ্গে। ফলে এখন তাঁরাও এই মন্দির থেকে দূরে থাকেন। আর আশেপাশের মানুষজন মহা সম্ভ্রমে মাথা নত করেন কালাটেশ্বরী কালী মন্দিরের সামনে।
কালাটেশ্বরী মন্দিরের কালী মূর্তি দেখলে মনে হবে জীবন্ত। দেবী সদা ক্রোধান্বিতা, রণরঙ্গিনী এবং করালবদনা। তাঁর গলায় আসল নরমুণ্ডের মালা ঝুলছে। ২০ ফুটের প্রতিমা রণসাজে সজ্জিতা। এখানে মা কালী দশভূজা, তাঁর দশ হাতে ত্রিশূল, গদা, তরবারি, বর্ম, শঙ্খ, চক্র, ধনুক, নরমুণ্ড এবং খড়গ। কার্তিক অমাবস্যা তিথি অর্থাৎ কালীপুজোর দিন থেকে এখানে তিনদিনের বিশাল মেলা বসে। পাকিস্তানের দূর-দূরান্ত থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আসেন পুজো দিতে। এমনকি বহু মুসলিম পরিবারও কালাটেশ্বরী কালী মন্দিরে আসেন মনবাসনা পূরণের জন্য মানত করতে। এখানকার কালী মন্দিরে এতটাই ভিড় হয় যে স্থানীয় প্রশাসন আলাদা করে বুলেটপ্রুফ কাঁচ দিয়ে মূর্তিটি ঘিরে দিয়েছেন। কথিত আছে, এককালে শিখ ধর্মগুরু গবিন্দ সিং এই মন্দিরে এসেছিলেন।
প্রত্নতাত্বিকদের মতে, এই মন্দির প্রাক ইসলামিক যুগের। ওই সময় বালুচিস্তান বা পাকিস্তানের জন্মই হয়নি, দক্ষিণ এশিয়াতে ইসলামেরও আগমন হয়নি। ইতিহাসবিদদের দাবি, যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৭৪ বছর আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। মন্দিরের দরজায় উর্দূ ভাষায় এই তথ্যই লেখা রয়েছে। পাকিস্তানে হিন্দুর সংখ্যা কমলেও কমেনি কালাটেশ্বরী কালী মাতার মহিমা। বরং তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কালাটেশ্বরী কালী মন্দিরে কালীপূজা, দশহরা, হোলি, গুরুপূর্ণিমা জাঁকজমক সহকারে হয়ে থাকে।
Discussion about this post