ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। এর থেকেই বোঝা যায়, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে ট্রেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াতের মাধ্যম। ভারতীয় রেল যেমন দেশের সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রেন চালায়, তেমনই ভাড়া থাকে সাধ্যের মধ্যে। ফলে দিনে দিনে ভারতীয় রেল হয়ে উঠেছে গোটা দেশের লাইফলাইন।
ভারতে প্রতিদিন ১ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি যাত্রী এবং ২০ লক্ষ টনেরও বেশি পণ্য ভারতীয় রেলপথে চলাচল করে। মোট ৭,৩২১টি স্টেশন বিশিষ্ট ভারতীয় রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৬৭,৪১৫ কিলোমিটারেরও বেশি। আর ভারতীয় রেল পণ্য পরিবহণের জন্য ২৫০,০০০টিরও বেশি ওয়াগন, এবং যাত্রী বহণের জন্য ৫৫,০০০টিরও বেশি কোচ এবং ১২,০০০টিরও বেশি লোকোমোটিভের মালিক। ফলে বুঝতেই পারছেন কেন ট্রেন ভারতীয়দের কাছে লাইফলাইন।
আরও পড়ুন: নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেনের সিটে কেউ বসতে পারবে না, জানেন রেলের এই নিয়ম?
ভারতে যাত্রীদের চাহিদা, গুরুত্ব, স্বাচ্ছন্দ্য, এবং অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ধরণের ট্রেন চালানো হয়। যেমন, বড় শহরগুলিকে কেন্দ্র করে সাবার্বান বা লোকাল ট্রেন। এছাড়া এক বড় শহর থেকে দূরের কোনও বড় শহর পর্যন্ত দূরপাল্লার ট্রেন। এই দূরপাল্লার ট্রেনগুলির মধ্যে আবার বেশ কয়েকটি পার্থক্য আছে। যেমন, মেল, এক্সপ্রেস, সুপারফাস্ট এবং সর্বশেষ বন্দে ভারত ট্রেন। এখন অনেকেই জানতে চান কিসের ভিত্তিতে কোনও ট্রেনকে মেল ট্রেন, এক্সপ্রেস ট্রেন বা সুপারফাস্ট ট্রেন বলা হয়?
সেই ব্রিটিশ আমলে ভারতে শুরু হয়েছিল যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা। সেই সময় ব্রিটিশ সরকাররে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা, চিঠিপত্র, গোপন দলিল বা টাকাপয়সা পাঠানো হতো ট্রেনে করেই। কারণ, দেশের এক কোনা থেকে অন্য কোনায় দ্রুত কিছু পাঠানোর সহজ মাধ্যম ছিল ট্রেন। সে সময় যে ট্রেনগুলিতে এই সমস্ত কাগজপত্র, চিঠিপত্র পাঠানো হতো সেগুলিকেই মেল ট্রেন বলা হতো। তবে বর্তমানে স্বাধীন ভারতের মেল ট্রেনের ব্যাখ্যা আলাদা। বর্তমানে ট্রেনের গতির ওপর নির্ভর করে কোনটি মেল, কোনটি এক্সপ্রেস ট্রেন। যেমন, যে সমস্ত কম গুরুত্বপূর্ণ দূরপাল্লার ট্রেন ঘণ্টায় কমপক্ষে ৫০ কিমি গতিবেগে চলাচল করে তাঁদের মেল ট্রেন বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পঞ্জাব মেল, কালকা মেল, মুম্বই মেল ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: ২৫ বছরে পা রাখল ভারতীয় রেলের গর্ব WAP7 লোকোমোটিভ
আবার যে সমস্ত ট্রেনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার বা তার কিছু বেশি সেগুলিকে এক্সপ্রেস ট্রেনের আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি তুলনায় অনেকটাই দ্রুতগতির হয়। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হয়। ফলে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই এক্সপ্রেস ট্রেনই সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। উদাহরণ হিসেবে অনেক ট্রেনের কথাই বলা যায়। বর্তমানে ভারতে বেশ কিছু সুপারফাস্ট ট্রেন চালু করা হয়েছে। এই ট্রেনগুলিও এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার বা তার বেশি গতিবেগে ছোটে। তবে সুপারফাস্ট ট্রেনগুলির স্টপেজ তুলনায় অনেক কম। ফলে সুপারফাস্ট ট্রেনগুলি অনেক কম সময়েই নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারে। ভারতে সুপারফাস্ট ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমাটার পর্যন্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে রাজধানী, শতাব্দী, তেজস, বন্দে ভারতের মতো ট্রেন সুপারফাস্ট মর্যাদা পায়।
Discussion about this post