আমরা ছোট থেকেই একটি হিন্দি প্রবাদ শুনে আসছি, সেটা হল “আপনা হাত জগন্নাথ”। কিন্তু জগন্নাথের যে হাতই নেই! তাহলে এই প্রবাদ কেন উৎপত্তি হল। আসলে যার নিজের হাত নেই, তাঁকে পরের হাতের ওপর ভরসা করতে হয়। ভগবান বিষ্ণুর অন্যতম অবতার জগন্নাথ। বিষ্ণুর চার-চারটি হাত থাকলেও জগন্নাথের দুটো হাতই নেই, অর্থাৎ ঠুঁটো জগন্নাথ। অথচ তিনিই গোটা জগতের নাথ বা প্রধান। এক অর্ধসমাপ্ত মূর্তির মধ্যেই তিনি সমস্ত জগত, সমস্ত ত্রিভূবনকে ধারণ করেন। তাঁর ইচ্ছাতেই জগৎ প্রতিপালিত হয়। কি অদ্ভুত বৈপরীত্য। তবে কেন জগন্নাথের হাত না থাকা নিয়ে রয়েছে এক আশ্চর্য পৌরাণিক কাহিনী। আসুন সবাই মিলে শুনি সেই কাহিনী।
হিন্দু পুরাণগুলির মধ্যে প্রাচীনতম পুরাণ হল স্কন্ধ পুরাণ। সময়ের হিসেবে স্কন্ধপুরাণ প্রায় দেড় হাজার বছরের বেশি প্রাচীন। এই স্কন্ধ পুরাণের উৎকল খণ্ডে পুরীর জগন্নাথের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া বহু প্রাচীন ওড়িয়া কবির লেখায় জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা জানা গিয়েছে। আর ইতিহাসের পাতা থেকে সেই সমস্ত গল্প একত্রিত করেই আমরা পূরীক্ষেত্রের জগন্নাথ ধাম সম্পর্কে ধারণা করি। আমরা জানি, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন এবং তাঁর স্ত্রী গুণ্ডিচার গল্প। স্বয়ং বিষ্ণুর আদেশে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা জগন্নাথের দারুমূর্তি বা কাঠের মূর্তি তৈরি করেছিলেন এক বদ্ধ ঘরে। কিন্তু বিশ্বকর্মার শর্ত ভঙ্গ করে রাজা মূর্তি তৈরির ঘরের দরজা খুলে ফেলায় জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এবং সেই রূপেই পুজো পান তিনজল। আমরা সেই গল্পে যাচ্ছি না, বরং আজ আপনাদের জানাবো জগন্নাথের এহেন রূপের ব্যাখ্যা।
প্রাচীন এক সংস্কৃত কাব্যে জগন্নাথের এহেন রূপের সুন্দর কয়েকটি ছত্র পাওয়া যায়।
অকণ্ঠস্য কণ্ঠে কথং পুষ্পমালা
বিনা নাসিকায়া কথং ধুপগন্ধ,
অকর্ণস্য কর্ণে কথং গীত-নৃত্যম
অপাদস্য পাদে কথং মে প্রণামং
অর্থাৎ, জগন্নাথ তোমার কণ্ঠ কোথায় যে তোমার গলায় মালা পড়াবো। বিনা নাসিকায় তুমি কেমন করে ধুপের গন্ধ গ্রহন করবে? কান ছাড়া কিভাবে তুমি নৃত্য-গীত উপভোগ করবে, আর তোমার পা কোথায়, যে প্রনাম করবো? জগন্নাথের দারু মূর্তি সমস্ত দেব-দেবীর মূর্তি থেকে একেবারেই আলাদা। এমন অসম্পূর্ণ বা অর্ধ মূর্তিতেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত প্রভু জগন্নাথ। কেন তাঁর এই রূপ? এর উত্তর রয়েছে আমাদের বেদ এবং পূরাণে। যিনি সমগ্র জগত সংসার তথা ত্রিভূবনের নাথ বা মালিক, তাঁর হাত, পা, কান, নাকের কি দরকার। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় গুরুপ্রণাম মন্ত্রের কথা। এই গুরু প্রণাম মন্ত্রে বারংবার জগন্নাথের উল্লেখ রয়েছে।
“অখণ্ডমণ্ডলাকারম ব্যাপ্তম যেন চরাচরম
তৎপদং দর্শীতাং যেন, তস্সৈসি গুরাবৈ নমহ”
গুরু প্রণাম মন্ত্রের এই দুই লাইনেই জগন্নাথের রূপের বিস্তৃত ব্যাখ্যা রয়েছে। যিনি অখণ্ড মণ্ডল তথা ব্রক্ষ্ণাণ্ড, চরাচরজুড়ে ব্যাপ্ত, তাঁর চরণ স্মরণ করে প্রণাম করলেই গুরুকে প্রণাম করা হয়। অর্থাৎ, জগন্নাথই হলেন জগৎগুরু বা মহাগুরু। এক্ষেত্রে বিষ্ণুর বামন অবতারের উল্লেথ করা যায়। বামন দেবতাকে দেখে দানবরাজ বালি তাচ্ছিল্য করেছিলেন। বামন দেবকে তিন পা জমি দান করার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু এরপরই বামন অবতারে বিষ্ণু তাঁর প্রথম দুই পায়ের বিস্তৃতি করে ত্রিভূবন এবং ব্রক্ষ্ণাণ্ড দখল করেন। এরপর তৃতীয় পা ফেলার জায়গা ছিল না। বিষ্ণুর ছল বুঝতে পেরে দানবরাজ বালি নিজের মস্তকেই সেই তৃতীয় পা ধারণ করতে চান। এখানেই তাঁর বিশালত্ব। ফলে বিষ্ণুর পা এখানে রূপক। তেমনই জগন্নাথের হাত, পা না থাকাটাও রূপক। সেই কারণেই তিনি ঠুঁটো, এক স্থানে বসে গোটা জগ
Discussion about this post