ওয়াকফ আইন নিয়ে বিরোধিতায় প্রায় সব বিরোধী দল। বিশেষ করে মুসলিম সংগঠনগুলি সাড়া দেশেই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলায় দেখা গেল হিংসাত্মক আন্দোলন। এর পিছনে কি ওয়াকফ, নাকি অন্য কিছু?
নতুন ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার লোকসভা ও রাজ্যসভা দুটোতেই এই বিল পাস করিয়েছে। ফলে এটি পুরোদস্তুর আইনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বিরোধিরা একত্রিত হয়ে সংসদে বড় প্রতিরোধ গড়ে তুললেও দেখা গেল বিজেপি এই বিল পাস করিয়েছে। এবার গোটা দেশেই নতুন ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। বিজেপির দাবি, নতুন এই আইন ওয়াকফ সম্পত্তিকে রক্ষা করবে এবং তা সাধারণ মুসলিম জনগণের কল্যানে কাজে আসবে। ওয়াকফ সম্পত্তি লুঠ হওয়ার থেকে রক্ষা করবে, দুর্নীতি ঠেকাবে। কিন্তু বিরোধীরা সেই তত্ত্ব মানতে নারাজ। ফলে মুসলিম আবেগ উস্কে দিয়ে চলছে জোরদার প্রচার। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম করতে এই নতুন আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা হয়েছে। আজই তার শুনানি শুরু হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখলাম, এই ওয়াকফ আইন নিয়ে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হয়ে গিয়েছে। সারা রাজ্যেই বিক্ষোভ প্রতিবাদ থাকলেও একমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। কেন, শুধুই কি ওয়াকফ ইস্যু, নাকি এর পিছনে আরও কোন বড় রহস্য লুকিয়ে আছে? কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গুলি ভয়াবহ রিপোর্ট পেশ করছে, যদিও রাজ্য সরকারের তত্ত্ব অন্য। তবে মুর্শিদাবাদ যে “আউট অফ কন্ট্রোল” সেটা কেউ অস্বীকার করছে না।
গত বছর শেখ হাসিনার পতনের পর যখন মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় এল, তখন থেকেই প্রমাদ গুনছিলো ভারত। ইউনূস সরকার যখন একের পর এক জঙ্গিনেতাদের জেল থেকে ছাড়ছে, ততই ভারতের উপর হুমকি আসতে শুরু করে। সেই সময় দ্রুততার সঙ্গে অরক্ষিত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করে ভারত। কিন্তু গোল বাঁধে মুর্শিদাবাদ ও মালদা জেলায়। ভৌগোলিকভাবে জলাকীর্ণ এলাকা হওয়ায় এখানে বেশ কিছু জায়গায় সীমান্ত বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরই সুযোগ নিয়ে চলতে থাকে বেআইনি অনুপ্রবেশ এবং জঙ্গিদের আনাগোনা। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এজেন্সি গুলি এই বিষয়ে বারে বারে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করলেও তা ভ্রুক্ষেপ করেনি রাজ্য প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গের ম্যাপ ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে মুর্শিদাবাদ ও মালদাহ জেলার মধ্যিখানে খুব সরু একটি প্যাসেজ। অর্থাৎ ফারাক্কা ব্যারাজের আশেপাশের এলাকা। একদিকে বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পাকুর এলাকা। এই এলাকাটি বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দৌলতে এবং পুলিশ প্রশাসনের ঢিলেমিতে অবাধে সীমান্ত পারাপার চলে এই এলাকায়। সদ্য শেষ হওয়া ঈদের সময়তেই এই এলাকায় বহিরাগতের আনাগোনা অত্যন্ত বেড়েছিল। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ সুতি ধুলিয়ান ফারাক্কা এবং ঝাড়খণ্ডের পাকুর এলাকায় বহিরাগতদের ভিড় ছিল। ঈদের সময়কাল থেকেই ছোটখাটো বিক্ষিপ্ত অশান্তি হচ্ছিল এই এলাকায়, কিন্তু রাজ্য প্রশাসন চোখ বন্ধ করেছিল বলে অভিযোগ। এবার ওয়াকফ সংশোধনী আইনের আড়ালে শুরু হয়ে গেল পরিকল্পিত হামলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুর্শিদাবাদের জনবিন্যাস পরিবর্তিত হয়েছে। এই জেলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেই তুলনায় মালদা জেলায় হিন্দু ও মুসলিমদের অনুপাত প্রায় সমান সমান। মুর্শিদাবাদের নিচে অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে নদীয়া জেলা। এই জেলার উত্তরাঞ্চলে মুসলিমদের আধিপত্য ধীরে ধীরে বেড়েছে। যার বেশিরভাগই বাংলাদেশী বেআইনি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলে দাবি করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলি।
মুহাম্মদ ইউনুসের আমলে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলায় যেভাবে মৌলবাদীদের তাণ্ডব দেখা গিয়েছিল, অনেকটা সেই কায়দায় মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ হামলা চালানো হয়েছে। বেছে বেছে হিন্দুদের টার্গেট করে এলাকা ছাড়া করা হয়েছিল। অন্তত ৪০০থেকে ৫০০পরিবার কোনো রকমে নদী পেরিয়ে মালদা জেলার কালিয়াগঞ্জে পৌঁছয়। যদি ওয়াকফ আইন নিয়েই বিরোধিতা তাহলে হিন্দুদের টার্গেট করা কেন? এখানেই লুকিয়ে আসল রহস্য। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মুর্শিদাবাদ জেলার মুর্শিদাবাদ ও লালবাগ এলাকায় সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন অশান্তি হয়নি। যা হল ওই উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভাজিকা সরু ওই অঞ্চলে। অর্থাৎ শামসেরগঞ্জ এলাকায়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেল রাজ্য প্রশাসনকে বাধ্য হয়ে বিএসএফ ডাকতে হলো। আবার কলকাতা হাইকোর্টও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিল। গোটা ব্যাপারটাই রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতা বলে চিহ্নিত করছে ওয়াকিবহাল মহল।
Discussion about this post