ভাবমূর্তি ফেরাতে চায় পুলিশ। আর জি কর কাণ্ড নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রবল চাপে কলকাতা পুলিশ। একদিকে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের প্রবল সমালোচায় বিদ্ধ হতে হচ্ছে। আবার শাসকদলের চাপ তো আছেই। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে কার্যত অসহাস দশা কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের। তাই এবার নিজেদের ভাবমূর্তি ফেরাতে সমাজ মাধ্যমকেই হাতিয়ার করতে উদ্যোগী হল পুলিশ।
দিন কয়েক ধরে সামাজিক মাধ্যমগুলিতে কলকাতা পুলিশের পেজ থেকে করা কয়েকটি পোস্ট এই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। কলকাতা বা রাজ্য পুলিশের কয়েকজন আধিকারিক নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও বিভিন্ন ধরণের বার্তা দিচ্ছেন। যেমন তাঁরা যেভাবে সারা বছর সাধারণ মানুষের জন্য নানান সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি। তাঁদের পরিবারের জন্য সময় দিতে না পারা ইত্যাদি ইত্যাদি। পুলিশের কয়েকটি পোস্ট ভাইরালও হয়েছে। আবার শাসকদলের নেতারাও সেই পোস্টগুলি শেয়ার করে বোঝাতে চাইছেন, যে পুলিশ তাঁর নিজের দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে পুলিশের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা সমাজ মাধ্যমে অন্যান্য পোস্ট, মিম, রিলস দেখলেই বোঝা যায়। যা কার্যত গণক্ষোভে পরিণত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেই কলকাতা পুলিশ বিক্ষোভরত কয়েকজনের ছবি চিহ্নিত করে সমাজ মাধ্যমে শেয়ার করে সাধারণ মানুষের সাহায্য চেয়ে পোস্ট করেছে। পুলিশের বক্তব্য, এই চিহ্নিত করা ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে সাহায্য করুক মানুষ। আর এই পোস্টগুলিতেই চোটে লাল সাধারণ মানুষ। একের পর এক কমেন্টে কার্যত ক্ষোভের সুনামি আছড়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা যথেষ্ট চিন্তার বিষয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। গত ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে আর জি কর হাসপাতালে হামলার ঘটনার পর প্রথমবার বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করে কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা হয়েছিল। সেবারই নেটিজেনদের একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, পুলিশ কেন হামলাকারীদের ধরতে পারছে না? পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক রয়েছে, তবুও কেন সমাজ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করে তাঁদের খোঁজ দেওয়ার আবেদন করা হল? এরকম আরও প্রশ্ন আছড়ে পড়েছিল সেই পোস্টে।
আবার গত ২৭ আগস্ট নবান্ন অভিযানের পরও একই ধরণের পোস্টে কয়েকজনকে চিহ্নিত করে কলকাতা পুলিশ একটি পোস্ট শেয়ার করেছিল। বিরোধীরা স্বভাবতই প্রশ্ন তুলছেন, কেন বারবার সমাজমাধ্যমে এই ধরণের পোস্ট করা হচ্ছে, এর পিছনে কি অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে? চাপের মুখে পুলিশ এবার অন্য রাস্তা নিল। নবান্ন অভিযানে আহত পুলিশকর্মীদের ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করা হল। আবার এক সার্জেন্টের চোখ নষ্ট হওয়ার পর তাঁর কাতর বার্তা পোস্ট করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকে। অন্যদিকে, নবান্ন অভিযানের ফাঁকে এক মহিলা পুলিশকর্মী এক পথকুকুরের শাবককে পরম যত্নে খাওয়ানোর ছবি দিয়ে লিখেছে, ডিউটি সেরে ফেরার পথে এক ক্ষুধার্ত সহনাগরিকের সঙ্গে নিজের টিফিন ভাগ করে নিচ্ছেন ওই মহিলা পুলিশ কনস্টেবল। এই পোস্টগুলিকে যেমন অনেকে ভালো চোখে দেখছেন, আবার কেউ কেউ তিরস্কারও করছেন।
কলকাতা পুলিশের অনেক কর্মীই আবার গর্জে উঠছেন, তাঁদের পরিবার, কন্যা সন্তানদের নিয়ে অপমানজনক পোস্ট নিয়ে। প্রসঙ্গত, আর জি কর কাণ্ডে অসংখ্য স্লোগান তৈরি হয়েছে প্রতিবাদ মিছিলগুলি থেকে। এরমধ্যে পুলিশকে আক্রমণ করেও কয়েকটি স্লোগান রয়েছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কারণ পুলিশকর্মী, আধিকারিকরা নির্দিষ্ট নির্দেশ পালন করেন ডিউটিতে থাকাকালীন। ফলে তাঁদের দোষারোপ করে কোনও লাভ নেই। এটা যেমন সত্যি, তেমনই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে যে প্রশ্ন উঠছে, সেটা খণ্ডন করার মতো কোনও যুক্তিও দেখাতে পারেনি কলকাতা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। কলকাতা হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিরাও একই প্রশ্ন তুলেছিলেন। যা নিয়ে স্পষ্ট কোনও উত্তর দিতে পারেনি সরকারি আইনজীবীরা। ফলে পুলিশ এখন শাঁখের করাতের মধ্যে পড়েছে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের ভাবমূর্তি ফেরানোর উদ্যোগ কতটা কাজে আসে সেটাই এখন দেখার।
Discussion about this post