অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন মুকুটমণি অধিকারী। বিজেপির টিকিটে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী একসময়ের সহকর্মী জগন্নাথ সরকার ও সিপিআইএমের অলোকেশ দাস। ২০১৯ সালে রাজনীতির আলোকবৃত্তে আসা মুকুটমণি গেরুয়াশিবিরের প্রতিনিধি বলেই পরিচিত ছিলেন কিছু মাস আগেও। তিনি রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক। তবে তৃণমূলের টিকিটে নয় বিজেপির টিকিটে। ফুল বদল করে এখন তিনি ঘাসফুল শিবিরে। দল বদল করে ভোটে লড়ার ছাড়পত্রও পেয়েছেন দ্রুত।
বিজেপির গুডবুকে একসময় নাম ছিল রানাঘাট লোকসভার তৃণমূল প্রার্থীর। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে হয়েছিলেন বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। তাঁকে রাজ্যে বিজেপির তফসিলি মোর্চার ‘ইনচার্জ’ও করা হয়েছিল। একই সঙ্গে মতুয়া মহাসঙ্ঘের সংগঠন সামলাতেন মুকুটমণি। জানা গিয়েছে ২০১৯ সালে জগন্নাথ সরকারের আগে মুকুটমণিকেই লোকসভা ভোটে লড়াইয়ের ছাড়পত্র দিয়েছিল বিজেপি। সরকারি চাকরিতে ইস্তফা গৃহীত না হওয়ায় সেবার লোকসভা ভোটে শিকে ছেড়েনি মুকুটের। বদলে জগন্নাথ সরকার দাঁড়িয়েছিলেন রানাঘাট লোকসভা থেকে। এরপর ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে রানাঘাট দক্ষিণ থেকে লড়াই করেন মুকুটমণি। দলকে জয়ও এনে দেন।
বিজেপির গুডবুকে নাম ছিল। ভোটে দাঁড়িয়ে দলের আস্থা ও ভরসা দুটোই জিতেছিলেন। তবে কেন দলবদল? রাজনীতিতে তাঁর উত্থানের গ্রাফ বেশ ভালো হলেও ব্যক্তিগত পরিসরে মুকুটের চরিত্র নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিয়ের মাত্র ১১ দিনের মাথায় মুকুটের বিরুদ্ধে গাহর্স্থ্য হিংসার অভিযোগ আনেন তাঁর স্ত্রী স্বস্তিকা মাহেশ্বরী। তিলজলা থানায় বধূ নির্যাতন, তোলাবাজি, বিশ্বাসভঙ্গ, আটকে রাখা ও হুমকি দেওয়ার মতো অভিযোগ স্বামী মুকুটের বিরুদ্ধে করেছিলেন স্বস্তিকা। এখনও তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা চলছে।
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপি কোন কোন আসনে পরীক্ষিত প্রার্থীদের উপর ভরসা রেখেছেন। সেই অর্থে মুকুটমণি বিধানসভা ভোটে লড়েছেন। সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণও হয়েছে। তাহলে গুডবয় মুকুটমণির উপর ভরসা রাখল না কেন বিজেপি। অনেকেই এরজন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে থাকা নারী নির্যাতনের মামলাকে দায়ী করছেন। সম্প্রতি তাহেরপুরে মিঠুনের জনসভায় বিজেপিতে যোগদান করেছেন মুকুটমণির স্ত্রী স্বস্তিকা মহেশ্বরী। দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, মুকুটমণিকে বিশ্বাস করলে তাঁর মতই ঠকতে হবে। উলেখ্য রাজ্যে সন্দেশখালি ঘটনাকে সামনে রেখে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে সরব বিজেপি। মেয়েদের সম্মান নিয়ে যে তারা বিশেষ সতর্ক আন্দোলনের প্রতিটা স্তরে বুঝিয়েছেন। সন্দেশখালি আন্দোলকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টায় কোন গাফিলতি করেনি বিজেপি। এমন অবস্থায় মুকুটমণিকে প্রার্থী করা হলে মুখ পুড়ত গেরুয়াশিবিরের। সুযোগে ফায়দা তুলে ছাড়ত না তৃণমূলও। এই পরিস্থিতিতে বিজেপিতে থেকে যে টিকিট পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব, তা হয়তো চিকিৎসক প্রার্থী বুঝতে পেরেছিলেন। আর সেখান থেকেই বেড়েছিল দুরত্ব। পরিবর্তীকালে তার ফল হিসেবে বিজেপি ত্যাগ করেন মুকুটমণি।
Discussion about this post