বিষ আর বিষ। প্রতিনিয়ত আরও বিষিয়ে উঠছে রাজধানী দিল্লি। মরশুমের সবথেকে বিষাক্ত বাতাস গ্রহণ করছেন দিল্লিবাসীরা। অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে দিল্লির বায়ু দূষণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর নিয়ম চালু করা হয়েছে। গাঢ় ধোঁয়াশার জেরে দৃশ্যমানতা নেমে এল মাত্র ১৫০ মিটারে। সবমিলিয়ে দূষণের জেরে বেহাল দশা দিল্লির আমজনতার। দূষণ রুখতে ইতিমধ্যেই একাধিক কড়াকড়ি শুরু করেছে দিল্লির সরকার। আরও কড়াকড়ি চেয়ে পিটিশন দায়ের হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সোমবার সেই আবেদন শোনে শীর্ষ আদালত। এদিন দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা তীব্রতর হয়ে ওঠা সত্ত্বেও গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন লাগু করতে দেরি করায় আম আদমি পার্টির সরকার ও কেন্দ্রীয় কমিশনকে দুষল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধির চতুর্থ স্তরের নিষেধাজ্ঞা চালু থাকবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’ চালু করা হয়েছে। আট দফা বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাতাসের গুণগত মান বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৪৫৭। এদিন সেই মাত্রা অনেকখানি ছাপিয়ে গেল। সিস্টেম অফ এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ অর্থাৎ SAFAR সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকাল ৬টায় দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা ৪৮১। যা কিনা চলতি মরশুমের সবচেয়ে খারাপ। দ্বারকার সেক্টর ৮এর একিউআই ৫০০ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে বলে খবর। কম দৃশ্যমানতার কারণে দেরিতে উড়েছে শতাধিক বিমান। ৩টি বিমানের শিডিউল বাতিলও করা হয়েছে। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণি ছাড়া বাকি সমস্ত ক্লাসের পড়ুয়াদের অনলাইল ক্লাসের ঘোষণা করেছে আপ সরকার। সরকারি কর্মীদের আপাতত ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী সরকারি অফিসের সময় বদলের ঘোষণা করেন। দিল্লি পুরসভা চলবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস খুলবে সকাল ৯টায়। চলবে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। দিল্লির সরকারি দপ্তরগুলিতে কাজ শুরু হবে সকাল ১০টায়। চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। পণ্যবাহী ও অন্য যানবাহনের ক্ষেত্রেও একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রাজধানীতে এই মুহূর্তে ট্রাকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কোনও ধরনের নির্মাণ কাজ এই মুহূর্তে করা যাবে না দিল্লিতে। পুরনো ডিজ়েল গাড়িও চালানো যাবে না। শুধুমাত্র দিল্লি নয়, সোমবার সকালে উত্তর প্রদেশ এবং হরিয়ানাতেও বাতাসের গুণগতমান ছিল খারাপ পর্যায়ে। ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল দিল্লি সংলগ্ন রাজ্যগুলি। রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার এই পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগে প্রশাসন থেকে পরিবেশবিদেরা। মনে করা হচ্ছে, দূষণের এই ফল ভুগতে পারেন নাগরিকেরা। শ্বাসকষ্ট-সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তাঁদের।
উল্লেখ্য, AQI ০-৫০ হলে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচনা হবে। ৫১ থেকে ১০০ হচ্ছে ‘সন্তোষজনক’। ১০১ থেকে ২০০ হল ‘মাঝারি’, ২০১ থেকে ৩০০ হল ‘খারাপ’, ৩০১ থেকে ৪০০ হল ‘খুব খারাপ’, ৪০১ থেকে ৪৫০ হল ‘ভয়ঙ্কর’ এবং ৪৫১-র অধিক AQI ‘অতি ভয়ঙ্কর’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
Discussion about this post