প্রায় আড়াই মাস যাবৎ চলছে আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে আন্দোলন। আন্দোলনে সামিল জুনিয়র ডাক্তাররা বারবার বৈঠকে বসেছেন কখনও মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বা কখনও মুখ্যসচিবের সাথে। বারবারই বৈঠক নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা। কিন্তু সোমবারের বৈঠক ছিল খানিকটা অন্যরকম। দীর্ঘ অনশনের পর এই সরকার-ডাক্তার বৈঠকের জন্য যেন উভয় পক্ষই মুখিয়ে ছিল। যেমন, মুখ্যসচিবের অনশন তুলে বৈঠকে বসার শর্ত না মানলেও বৈঠকে ‘অধিক সন্ন্যাসী’র সমাবেশ করতে চাননি ডাক্তাররা, ঠিক তেমনই ১০ জন প্রতিনিধি নেওয়ার শর্ত থাকলেও জুনিয়র ডাক্তারদের ১৭ জন প্রতিনিধিকেই নবান্ন সভা ঘরে বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া হয়, উপরি পাওনা লাইভ স্ট্রিমিং। আগের বৈঠকে যে লাইভ স্ট্রিমিং-এর দাবি মুখ্যমন্ত্রী মানেননি তা এবার না চাইতেই করার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে তার তিন গুণ বেশি সময় ধরে চলল বৈঠক। কিন্তু দুই পক্ষেরই এই উদ্যোগের পরেও জট কি কাটলো? সোমবারের বৈঠকে এমন অনেক কথা ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বলার ছিল যা তারা বলতে পারেননি। তবুও দশ দফা দাবি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। কিছু দাবি সরকার মেনেছেন, কিছু দাবিতে মতানৈক্য হয়েছে সরকার এবং ডাক্তারদের মধ্যে। মূলতঃ তিনটি বিষয়ে মতানৈক্য হয়েছে উভয় পক্ষের; আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৭ জনের সাসপেনশন, স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ, টাস্কফোর্স গঠন। গ্রিভান্স কমিটির সিদ্ধান্তে ৪৭জনের সাসপেনশন তোলার ঘটনাকে থ্রেট কালচার বলে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাল্টা জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, তাঁরা চিহ্নিত ক্রিমিনাল, মুখ্যমন্ত্রী পুনরায় তদন্ত করতে পারেন। স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ নিয়ে বৈঠকেও নিমরাজি সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, এতে রাজ্যের এক্তিয়ার নেই। অপর দিকে, টাস্কফোর্স গঠন নিয়ে বৈঠকে এবং বৈঠক পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনেও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দেবাশীষ হালদার স্পষ্ট বলেন, ব্যবস্থা যত কেন্দ্রীভূত তাতে ততই সমস্যা বেশি। প্রান্তিকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলার হাসপাতালে কেউ নির্যাতিত হলে তাকে অভিযোগ করতে টাস্কফোর্স অবধি পৌছাতে হবে। তাঁরা মনে করেন এটা সঠিক পদ্ধতি নয়। মেডিকেল কলেজে কোনও ঘটনা ঘটলে তার তদন্ত চালানোর প্রাথমিক দায়িত্ব আভ্যন্তরীণ কমিটির বলে জানিয়েছেন দেবাশীষ হালদার। যদিও জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন যে কলেজ ইলেকশনের দাবি তারা আদায় করতে পেরেছেন। লাইভ স্ট্রিমিং চলাকালীনই মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্য সচিব যৌথভাবে ঘোষণা করেছেন যে ২০২৫ সালের মার্চে হবে মেডিকেল কলেজ ইলেকশন। তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও যত দ্রুত সম্ভব নেওয়া হবে। তবে সব শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কথা ‘মেনে’, সাধারণ মানুষ এবং বিদ্বজ্জনের অনুরোধের ‘সম্মানে’ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বৈঠক শেষে অনশন মঞ্চ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করেই এই কথা জানালেন তাঁরা। অন্যদিকে মঙ্গলবার ধর্মঘটের কর্মসূচি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দেবাশীষ হালদার জানালেন, “ধর্মঘট করার পরিস্থিতিতে আমরা নেই।” এছাড়া এই সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী ২৭শে অক্টোবর, রবিবার নির্যাতিতার বিচার চেয়ে আন্দোলন ‘তীব্রতর’ করতে এক গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। এই কনভেনশন আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে হবে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা, যদিও এর সময় জানানো হয়নি। তবে, পরপর দুই কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও ঝুলে থাকা দাবি কতটা পূরণ হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে। দৃশ্যতই না চাইতেও কর্মসূচি প্রত্যাহার করা ছাড়া আরও কোনও উপায় না থাকার অভিব্যক্তিই স্পষ্ট হয়েছে বৈঠকের পরের ওই সাংবাদিক সম্মেলনে।
আরও নামলো তাপমাত্রার পারদ। রাতারাতি ২০ থেকে ১৯ এর ঘরে পৌছালো কলকাতার তাপমাত্রা। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেও গতকাল রাতে কমেছে তাপমাত্রা। সেখানে...
Read more
Discussion about this post