আসন্ন চতুর্থ দফার নির্বাচনে বাংলার ৮ আসনে ভোট রয়েছে। রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে অধীর চৌধুরী, এসএস আলুওয়ালিয়া, দিলীপ ঘোষ, মহুয়া মৈত্রদের।
আগামী ১৩ ই মে চতুর্থ দফা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলা আসনে অধিকাংশ প্রার্থী হেভিওয়েট। কেউ ৫ বারের সাংসদ তো কেউ ৩ বারের। কারোর আবার দ্বিতীয়বার ভোট যুদ্ধ হলেও রাজ্য রাজনীতিতে তার বড় নাম। আগামী দফার নির্বাচনে ভোট হতে চলেছে রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, বোলপুর, বীরভূম, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল ও বহরমপুর। কোন হেভিওয়েট প্রার্থী কোন আসন থেকে লড়ছেন, ভোটে তার অভিজ্ঞতার কথা ইত্যাদি ইত্যাদি একবার ঝালিয়ে নেব
বহরমপুর
বহরমপুর থেকে লড়ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। তিনি ৫ বারের কংগ্রেস সাংসদ। এবার জিতলে পাঁচের সঙ্গে আরও একটি সংখ্যা যোগ হবে। বাংলার মানুষ কংগ্রেসের মুখ বলতে এখন অধীররঞ্জন চৌধুরীকেই চেনেন। বলাবাহুল্য কংগ্রেসের পতাকা বাংলার মাটিতে একাই বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। যতই ঝড়-ঝাপটা আসুক না কেন অধীরের দলের প্রতি আনুগত্য, ভালোবাসা, নিষ্ঠা বাংলার বুকে এক উদাহরণ তৈরি করেছে। বহরমপুর আসনের ইতিহাস বলছে, অধীরের আগে মাত্র এক বার জয় পেয়েছিল কংগ্রেস। স্বাধীনতার পর থেকে টানা সাত বার ‘কোদাল-বেলচা’ প্রতীকে জিতেছিলেন আরএসপির নেতা ত্রিদিব চৌধুরী। ১০ বছর পর ১৯৯৯ সালে আরএসপির সাংসদ প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়কে প্রায় এক লাখ ভোটে হারিয়ে দেন অধীর। সেই যে শুরু। গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা একটা সময় পর্যন্ত ছিল ‘অধীরগড়’। এবার তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান।
কৃষ্ণনগর
সংসদ থেকে বহিষ্কারের পর এবারও মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা ভোটে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। সংসদের অন্দরে ও সংসদের বাইরে মহুয়া এনডিএ সরকারের কঠোর সমালোচক বলে পরিচিত। সম্প্রতি প্রশ্নকাণ্ডে মহুয়া মৈত্র বহিষ্কৃত হন সংসদ থেকে। তবে দল তাঁর উপর আস্থা বহাল রেখেছে। মহুয়াকে টিকিট দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বুঝিয়ে দিয়েছেন বিরোধীরা মহুয়ার বিরুদ্ধে যেমন অভিযোগই তুলুক না কেন দল মহুয়াকেই চায়। ২০১৯ সালে প্রথমবার মহুয়া মৈত্র লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিজেপির কল্যাণ চৌবেকে ৬৫ হাজার ভোটে হারিয়ে দেন সেবার। এবার তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে রাজমাতা অমৃতা রায়কে।
বীরভূম
তখন ভরা বাম শাসন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের রেশ কতটা ভোটে পড়বে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। সেই সময় অর্থাৎ ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে বীরভূম থেকে জিতে ছিলেন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। এরপর ২০১৪ ও ২০১৯ পর পর দুটি লোকসভা ভোটে দলের মান রেখেছেন শতাব্দী। আসন্ন নির্বাচনে অনুব্রত অনুপস্থিত। নিন্দুকরা বলছেন এবার ভোটে জিততে বেশ বেগ পেতে হবে শতাব্দীকে। কারণ যিনি ভোট করাতেন তিনিই তো জেলে। শতাব্দীর বিরুদ্ধে বিজেপির টিকিটে লড়ছেন দেবতনু ভট্টাচার্য
বর্ধমান-দুর্গাপুর
গড় পরিবর্তন হয়েছে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের। তিনি মেদিনীপুরের পরিবর্তে লড়ছেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে। শাসকদলের দাবি দিলীপকে খেদিয়ে বার করে দিয়েছে তাঁর দলের লোকেরাই। তাঁকে মূলত গ্যারেজ করে দিতেই আসন পরিবর্তন। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের একাংশের দাবি দিলীপ যেখান থেকেই দাঁড়াক না কেন তাঁর নিজের আলাদা ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। তিনি মানুষের জন্য কাজ করেন। তাঁর ফলও পাবেন ব্যালট বক্সে। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন কীর্তি আজাদ। বিহারের দারভাঙ্গার লোক কীর্তি আগেও ভোটে জিতেছেন। তবে প্রত্যেকবারই বিজেপির টিকিটে। দল বদলের পর জয় এখনও কীর্তির কাছে অধরা
আসানসোল
দিলীপের মত গড় পরিবর্তন হয়েছে এসএস আলুওয়ালিয়ারও। বিজেপির বর্ষিয়ান এই নেতা রাজনীতিতে পোড় খাওয়া লোক। বর্ধমান-দুর্গাপুরের বদলে তিনি আসন্ন নির্বাচনে লড়ছেন আসানসোল থেকে। মূলত হিন্দী বেল্ট আসানসোল থেকে তাঁর জয় আগেভাগেই নিশ্চিত। এমনটাই মনে করছেন অনেকে। ষষ্টদশ ও সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনেও তিনি বিজেপির মান রেখে ছিলেন। ষষ্টদশ নির্বাচনে লড়েছিলেন দার্জিলিং থেকে ও সপ্তদশে দুর্গাপুর-বর্ধমান থেকে। বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে রাজ্যসভার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন দীর্ঘদিন। প্রথমে কংগ্রেস ও পরে বিজেপির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আসানসোল থেকে লড়ছেন অভিনেতা সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা
শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে চতুর্থ দফার ভোটের। আগামী সোমবার এই সকল প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে ব্যালট বক্সে। কে জিতবেন কে হারবেন চায়ের ঠেক থেকে শুরু করে ক্লাব হাউজ চলছে জোর আলোচনা
Discussion about this post