রাজনীতি নাকি বুড়োদের জন্য। তরুণ প্রজন্ম রাজনীতি বিমুখ। এমনই দাবি করে আসছেন রাজনীতির কারবারিরা। যে কয়েকজন অল্প বয়সে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন, তাঁরা সকলেই পারিবারিক সূত্রে অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতির মসনদে প্রবেশ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাহুল গান্ধি, অখিলেশ যাদব বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও সেই ট্রেন্ড বজায় রেথে আরও কয়েকজন সংসদে প্রবেশ করলেন, যাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা এই বয়সে হয় পড়াশোনা করেন, না হয় সদ্য কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে এই পাঁচ তরুণী ভোটে লড়েছেন। এবং ভোটে জিতে সাংসদও হয়েছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক তাঁদের পরিচয় এবং উত্থানের বর্ণময় কাহিনী।
সম্ভাবী চৌধুরী, বিহার
এই তালিকায় প্রথমেই যার নাম আসে তিনি হলেন সম্ভাবী চৌধুরী। ২৫ বছরের এই তরুণী এবার বিহারের সমস্তিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাঁকে এনডিএ জোটের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। সম্ভাবী বিহারের লোকজনশক্তি পার্টির টিকিটে সমস্তিপুর আসনে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস প্রার্থীকে হারিয়েছেন ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ভোটে। সম্ভাবী সোশিওলোজিতে মাস্টার ডিগ্রি করে টাইমস অফ ইন্ডিয়া পক্রিকায় শিক্ষানবীশ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। সেই সঙ্গে বিহারের মগধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছেন। এরপরই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। যদিও সম্ভাবীর পরিবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর বাবা অশোক চৌধুরী নিতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের প্রভাবশালী নেতা এবং বিহারের মন্ত্রী। কিন্তু সম্ভাবী রামবিলাশ পাসওয়ানের লোকজনশক্তি পার্টিতেই যোগ দেন। এবং কনিষ্ঠতম প্রার্থী হিসেবে লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন।
ইকরা চৌধুরী, উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশের কাইরানা লোকসভা কেন্দ্র থেকে এবার সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী ইকরা চৌধুরী জিতে বড় চমক দিয়েছেন। মাত্র ২৯ বছর বয়েসেই সাংসদ হয়ে নজির গড়লেন লন্ডন থেকে আন্তর্জাতিক পলিটিক্স আইনে এমএসসি করা ইকরা। উল্লেখ্য এবারই প্রথম ভোটে লড়লেন তিনি। যদিও তাঁর পরিবার বিগত দুই প্রজন্ম ধরেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দাদু এবং বাবা সাংসদ ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ইকরার মা উপনির্বাচন জিতে সাংসদ হয়েছেন। এবার ইকরা সেই জায়গা দখল নিল। ইকরার দাদা সমাজবাদী পার্টির টিকিটে তিনবারের বিধায়ক। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ২৯ বছরের ইকরা সমাজবাদী পার্টির কনিষ্ঠতম সদস্য হিসেবে টিকিট দিয়েছিলেন অখিলেশ যাদব। অকরা কিয়ারানা লোকসভায় বিজেপির প্রার্থীকে প্রায় ৭০ হাজার ভোটে হারিয়ে অখিলেশকে ভরসা জুগিয়েছেন।
সঞ্জনা জাটভ, রাজস্থান
অষ্টাদশ লোকসভায় ভারতের কনিষ্ঠতম সাংসদের মঘ্যে অন্যতম রাজস্থানের ভরতপুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সঞ্জনা জাটভ। মাত্র ছয়মাস আগেই যিনি বিধানসভা ভোটে হেরেছিলেন, সেই তিনিই লোকসভায় অসাধ্য সাধন করলেন। সাধারণ গৃহবধূ সঞ্জনা জাটভের বয়স মাত্র ২৫ বছর। তিনি রাজস্থানের ভরতপুর আসন থেকে বিজেপির বিদায়ী সাংসদ প্রার্থীকে ৫১ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়ে চমক দিলেন। মাত্র এক বছর আগে কংগ্রেস নেতা সচীন পাইলটের হাত ধরেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন সঞ্জনা। ছয়মাস আগেই বিধানসভা ভোটে রাজস্থানের আলওয়ার আসনে মাত্র ৪০০ ভোটে হেরে যান সঞ্জনা। এরপর তিনি শ্বশুরবাড়ি ভরতপুরে এসে কংগ্রেসের সংগঠনের দায়িত্ব নেন। এবং ভরতপুর আসনে সচিন পাইলট তাঁকেই প্রার্থী করেন। সঞ্জনা রাজস্থানের মহারাজা সুরজমল ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন সবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য হল, সঞ্জনার পরিবার এর আগে রাজনীতিতে কোনও যোগ ছিল না।
প্রিয়া সরোজ, উত্তরপ্রদেশ
মাত্র ২৫ বছর বয়েসে সাংসদ হয়ে সকলের নজর কেড়েছেন প্রিয়া সরোজ। উত্তরপ্রদেশের মছলিশহর লোকসভা কেন্দ্রে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে তিনি জিতেছেন। প্রিয়ার বাবা তুফানি সরোজ সমাজবাদী পার্টির তিনবারের সাংসদ ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের মছলিশহর লোকসভা কেন্দ্রের প্রথম মহিলা সংসদ হয়ে নজির গড়লেন প্রিয়া, সেই সঙ্গে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের কনিষ্ঠতম সাংসদও হয়েছেন। প্রিয়া ২০১৯ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে, নয়ডার অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি লাভ করেন। ২০২৪ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়েসে লোকসভা ভোটে লড়ে তিনি হারিয়ে দিলেন বিজেপির বিদায়ী সাংসদকে।
প্রিয়াঙ্কা জার্কিহোলি, কর্ণাটক
এরপরেই আসছে যার নাম তাঁর বয়সও মাত্র ২৭ বছর। মোটা বেতনের চাকরির হাতছানি এড়িয়ে বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন প্রিয়াঙ্কা জার্কিহোলি। কর্ণাটকের চিক্কোডি লোকসভা কেন্দ্রে ২৭ বছরের আদিবাসী তরুণী প্রিয়াঙ্কার ওপরই ভরসা রেথেছিল কংগ্রেস নেতৃত্ব। কর্ণাটকের বেলগাভির বিখ্যাত বিশ্বেশ্বরা টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করে একটি নামী সংস্থায় যোগ দেন প্রিয়াঙ্কা। পড়ে নিজেই একটি বিজনেস ফার্ম খুলেছেন। সেই সঙ্গে বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ। উল্লেখ্য, প্রিয়াঙ্কা জার্কিহোলি হলেন প্রথম আদিবাসী মহিলা সাংসদ, যিনি স্বাধিনতার পর কর্ণাটকের কোনও অসংরক্ষিত আসনে জিতেছেন। আরও একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হল, কর্ণাটকে একমাত্র প্রিয়াঙ্কার কাছেই হেরেছে বিজেপি। কারণ দক্ষিণের এই রাজ্যে একমাত্র চিকোড্ডি লোকসভা আসন বাদে সবকটিতেই জিতেছে বিজেপি।
Discussion about this post