রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে বাংলাদেশে। দেশত্যাগী পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের বেশিরভাগ প্রশাসনিক শীর্ষকর্তাদের সরানো হচ্ছে। প্রবল চাপের মুখে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছিলেন হাসিনা জমানার প্রধান বিচারপতি। এবার সেই চাপের মুখেই পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল পদত্যাগ করার আগে এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আগামীতে আমাদের দেশকে প্রবল সংস্কারের দিকে এগিয়ে নিয়ে আরও সুন্দর একটি বাংলাদেশ সৃষ্টির যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আমরা সবাই আশাবাদী, সেই স্বপ্ন অচিরেই বাস্তবায়িত হবে। আগামী দিনের বাংলাদেশে প্রশাসন, বিচার, নির্বাচন সব কিছু অনেক সুন্দর হবে।
সূত্রের খবর, বাংলাদেশে তদারকি সরকার গঠনের পরই প্রশাসনের সর্বস্তরে সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা মণ্ডলী বা মন্ত্রিসভা সেই সংস্কার তদারকি করছে। হাসিনা জমানায় নিয়োযিত প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নির্যাচন কমিশনের কি করণীয় তা জানতে চেয়ে বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার চিঠি দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুসকে। কিন্তু কোনও সাড়া পাননি। ফলে বাধ্য হয়েই তাঁরা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দাবি, সাংবিধানিক সংকট এড়াতেই তাঁরা সরে দাঁড়ালেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ ভেঙে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে ভোট করাতে হয়। শেখ হাসিনার প্রস্থানের পরই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। এরপর কেটে গিয়েছে একমাস। এখনও যা পরিস্থিতি এত জলদি ভোট করানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের নতুন তদারকি সরকারের হাবভাব দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তাঁরা এখনই ভোটের রাস্তায় হাঁটবেন না। ফলে তিনমাসের মধ্যে ভোট করাতে না পারলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। যে হেতু ভোট করানোর দায় নির্বাচন কমিশনের। তাই এই দায় এড়াতেই পদত্যাগ করলেন পাঁচ নির্বাচন কমিশনার। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশগ্রহণ করেনি। যা হয়েছিল ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনেও। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচন বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপি আসন পেয়েছিল মাত্র ৬টি আর হাসিনার আওয়ামী লিগ পেয়েছিল ২৫৮টি আসন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলি হারের ভয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহন করেনি। কিন্তু ২০২৪ সালে জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশে অভিযোগ উঠেছিল শেখ হাসিনা একতরফা নির্বাচন করাচ্ছে। কিন্তু এদিন পদত্যাগের আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, এবার ২৯৯টি আসনে মোট ৯৬৯ জন প্রার্থী অংশগ্রুহন করেছিলেন। ফলে একতরফা নির্বাচন হয়েছে এ কথা বলা যাবে না।
Discussion about this post