চরম আর্থিক সংকটের মুখে মলদ্বীপ। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্র এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। এমনিতেই ওই দ্বীপরাষ্ট্রে ভারত বিরোধী বলে পরিচিত মহম্মদ মইজ্জুর সরকার গঠিত হয়েছে। এরপরই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটিয়ে চিনের সঙ্গে আর্থিক গাঁটছড়া বাঁধতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মইজ্জু। ফলে চিনা ঋণের চাপে মলজ্বীপের খুব শীঘ্রই হাঁসফাঁস অবস্থা হতে চলেছে বলেই আন্তর্জাতিক মহলের দাবি। এরমধ্যেই খবর, মলদ্বীপের বিদেশী মুদ্রার ভাণ্ডার কমছে। পাশাপাশি মলদ্বীপের ব্যবহারযোগ্য ডলারের ভাণ্ডারও প্রায় ফুরিয়ে আসছে। এরমধ্যেই সে দেশের বিনিয়োগকারীরা দলে দলে সুকুক বন্ড বিক্রি করে দেওয়ার ফলে অবস্থা আরও খারাপের দিকে গিয়েছে বলে দাবি আর্থিক বিশেষজ্ঞদের। একসময় ভারতের পরম বন্ধু মলদ্বীপ পালাবদলের পর চিনপন্থী হয়েছিল। এখন বাংলাদেশও রাজনৈতিক পালাবদলের পর ভারতের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে চিন এবং পাকিস্তানপন্থী হয়েছে। ফলে আগামীদিনে বাংলাদেশও দেউলিয়া হওয়ার পথে এগোতে পারে বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এখন প্রশ্ন হল সুকুক বন্ড কি এমন যে একটা দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি টলিয়ে দিতে পারে? উত্তর হল, সুকুক হল একটি ইসলামী আর্থিক শংসাপত্র, যা শরিয়া মেনে তৈরি এক সরকারি বন্ড। এই বন্ড প্রচলিত মূলত ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিতে। গত এক দশকে বিশ্ব বাজারে সুকুকের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি, আচমকাই তা নিম্নমুখী হতে শুরু করে। বিশেষ করে মার্কিন ডলারের নীরিখে সুকুকের দাম সম্প্রতি ৭০ সেন্টের বেশি কমেছে। এবং তা আরও পতনের মুখে পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা। এই আবহেই মলদ্বীপে সুকুক বন্ড বিক্রি করে দেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। ফলে মলদ্বীপ দেউলিয়া হয়ে পড়ার অবস্থায় চলে এসেছে বলেই মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা।
সুকুক’ শব্দটি প্রকৃতপক্ষে ‘সক্ক’ শব্দটির বহুবন। এটি একধরনের আইনগত দলিল বা চুক্তি। সুকুকের প্রথম প্রচলন সপ্তম শতাব্দীতে, বর্তমান সিরিয়ার দামেস্কে। সুকুক হল কোনও সেবা প্রকল্প, বিনিয়োগ কিংবা কোনও স্থাবর সম্পদ। এবং সেটা ভোগদখলের অধিকারের অবিভাজিত স্বত্বের প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামসম্মত সনদ। অর্থাৎ সুকুক হচ্ছে কোনও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ কিংবা কোনও সেবার আংশিক মালিকানা নির্দেশকারী দলিল। বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সরকার তিনটি স্বতন্ত্র বিনিয়োগ সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা তুলেছে। সাধারণত ঘাটতি বাজেট পূরণে সরকার প্রচলিত ব্যাঙ্কগুলো থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। প্রচলিত বন্ডের সঙ্গে সুকুকের মূল পার্থক্য হল সুকুক কোনও সম্পদের ওপর স্বত্ব বা মালিকানার ভিত্তিতে ইস্যু করা হয়। যার অর্থ, সুকুক কোনও ঋণ নয়, বরং এটি আংশিক মালিকানা বা স্বত্ব। সুকুকের মূল বৈশিষ্ট্য হল এর পরিচালনা সম্পূর্ণভাবে শরিয়াহভিত্তিক হওয়ায় এতে রিবা বা সুদ নেই।
গোটা বিশ্বেই যখন সুকুক বন্ড মুখ থুবড়ে পড়ছে, তখন বাংলাদেশেও পড়বে। যেমন মলদ্বীপে পড়েছে। চলতি বছরের জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী, মলদ্বীপের বিদেশী মুদ্রা ভাণ্ডারের পরিমান ৩৯.৫ কোটি ডলার। কিন্তু ব্যবহারযোগ্য ভাণ্ডার মাত্র ৪৫ লক্ষ ডলার। এই আবহেই মলদ্বীপে সুকুক বন্ড বিক্রির ধূম পড়ে গিয়েছে। যা নিয়ে সিঁদূরে মেঘ দেখছে মলদ্বীপের প্রশাসন। ফলে নতুন করে বিপদে পড়েছে মুইজ্জু সরকার। জানা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে সুকুকের যে ঋণপত্রগুলির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কথা রয়েছে, সেগুলির জন্য ৫০ কোটি ডলার খরচ করতে হবে। যা এই মুহূর্তে চাপের ব্যাপার মুইজ্জু সরকারের। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকের আশঙ্কা, বাংলাদেশের সঙ্গেও এটা হবে না তো? এমনিতেই বাংলাদেশ এখন প্রবল আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর ওপর আন্তর্জাতিক বোঝা এবং চিনের ঋণের ফাঁদে পড়ে গেলে মলদ্বীপ বা শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বাংলাদেশেও।
Discussion about this post