এবারে বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর আবহ একেবারে আলাদা। কারণ এবার রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে মৌলবাদী কট্টরপন্থীদের রমরমা বেড়েছে। সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নেমে আসছে হুমকি, হামলা এবং নির্যাতনের খাঁড়া। আবার দুর্গাপুজো উদ্যোক্তাদের নানা হুমকি, মোটা টাকার দাবি এবং ১৬ দফা ফতোয়া জারি করার মতো ঘটনাও খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। তবুও এবারের দুর্গাপুজোয় তদারকি সরকার তিনদিন ছুটি ঘোষণা করেছে। যা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারেনি কট্টরপন্থীরা। ফলে পুজোর আগেই পুজো মণ্ডপে ঘটে গেল ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বাংলাদেশের দুর্গাপুজোর বহু মণ্ডপ এবং প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা সামনে আসছে। যা শুরু হয়েছিল মহালয়ার আগের রাত থেকেই। এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই সে দেশের হিন্দুরা প্রবল আতঙ্কে রয়েছেন।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, কিশোরগঞ্জের শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়ায় মা দুর্গার প্রতিমা ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এমনকি আরও ৬টি মূর্তিতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই আখড়ায় এবারই প্রথম দুর্গাপুজো হচ্ছিল। এছাড়া নড়াইলের মিরাপাড়া বাজার সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতীরা। পাশাপাশি পাবনার সুজাপুরে গত চারদিনের ব্যবধানে দুটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভেঙে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। রংপুর সদরের লাহিড়ীর হাট এলাকায় একটি মন্দিরেও হামলা হয়েছে বলে খবর। সবমিলিয়ে এই ঘটনার পর আতঙ্কে ভুগছেন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার গঠিত হয়েছে। মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের তরফে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছিল, দুর্গাপুজোয় বাংলাদেশে কড়া সুরক্ষা প্রদান করা হবে। কিন্তু এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই তাণ্ডব শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে ইউনূসের নেতৃত্বে তদারকি সরকারের উদ্যোগ যে কোনও ভাবেই বাস্তবায়িত হয়নি সেটা দিনের আলোর মতো পরিস্কার। এই আবহে এবার ঢাকায় অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার তাঁরা কুমারী পুজো করবে না। যদিও দুর্গাপুজোর বাকি আয়োজন হবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন। তবে ঢাকায় না হলেও নারায়ণগঞ্জ. কুমিল্লা, বাগেরাহাট-সহ বিভিন্ন জায়গায় রামকৃষ্ণ মিশনের যে শাখা রয়েছে, সেখানে কুমারী পুজো হতে পারে আগের মতোই।
জানা যাচ্ছে, গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ৩৩ হাজার দুর্গাপুজো হয়েছিল। এবার এই সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। কারণ তদারকি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছিল। যা নিয়ে ভারত সরকার বারবার বাংলাদেশকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু সেই হামলার ঘটনা কমেনি। এবার হিন্দুদের বড় উৎসব দুর্গাপুজোর আগে নতুন করে মন্দিরে বা পুজো মণ্ডপে আক্রমণ শুরু হয়েছে। যদিও দুর্গাপুজো নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে যাতে দুর্গাপুজো হতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে যাতে পুজো হয় সেদিকেও নজর দেওয়া হবে। এমনকি বিভিন্ন পুজো কমিটিকে তদারকি সরকার ৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু হামলার ঘটনা থামানো নিয়ে কোনও সদর্থক প্রয়াস দেখা যাচ্ছে না বলেই দাবি করছেন বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠনগুলি।
Discussion about this post