মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে এমন খবর আসার পর বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগের উদ্যোগের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে শুক্রবার ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় এ ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আরাকানের পরিস্থিতি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ করা হবে কি না তা নিয়ে ‘সুচিন্তিত’ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে এক সপ্তাহের যুদ্ধে মংডু, বুথিডং, পালেতাওয়ার শহর-সহ মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এই পরিস্থিতিতে সেখানে বসবাসকারী কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে উদ্বিগ্ন মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ইউনূসের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান শুক্রবার জানিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রক আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা। তিনি বলেন, ‘‘রাখাইন প্রদেশের ৮০-৮৫ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। বিশেষ করে যে সব এলাকায় রোহিঙ্গাদের প্রধান বসবাস, সেগুলি তাদের নিয়ন্ত্রণে। এর চেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তও আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে।’’ খলিলুর জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি বনাম মায়ানমারের শাসক সামরিক জুন্টা বাহিনীর লড়াইয়ের চূড়ান্ত ফল কী হয়, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে উদ্যোগী হচ্ছে, যাতে অন্তত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। তবে গভীর ভাবে বিবেচনা না করে এ বিষয়ে নির্ণায়ক কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে না বলে জানান তিনি। বিদ্রোহীরা সীমান্ত দখলের পরে বাংলাদেশ সরকার টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে। ফলে অসুবিধায় পড়েছেন চট্টগ্রাম ডিভিশনের বহু মানুষ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একদা জুন্টার ‘চক্ষুশূল’ রোহিঙ্গা মুসলিমরা চলতি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সরকারি বাহিনীর সহযোগী হয়েছিল! আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজ়েশনের যোদ্ধারা গত ছ’মাস ধরে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় জুন্টা ফৌজের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়েছে। যদিও তাতে ‘শেষরক্ষা’ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা মুসলিমরা নতুন করে আরাকান আর্মির নিশানা হতে পারেন বলে আশঙ্কা। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে চট্টগ্রামের টেকনাফ উপজেলার কিছুটা অংশ নিজেদের অধিকারে নিয়েছে মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। তবে চট্টগ্রামে পা রাখার আগে বাংলাদেশের বিজিবির সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষ হয় বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু আরাকারদের তীব্র হামলাতে শেষপর্যন্ত পিছে হটতে বাধ্য হয় বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। মুলত ওই অঞ্চলটি গভীর অরণ্য-পাহাড় ঘেরা হওয়ায় বাংলাদেশি সেনার চেয়ে আরাকান যোদ্ধাদের যুদ্ধ পরিচালনার দক্ষতা অনেকটাই বেশি। তাই এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আরাকানদের বিরুদ্ধে বেশিক্ষণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি বিজিবির পক্ষে। এমনটাই মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞমহল। যদিও চট্টগ্রামের জমি হাতছাড়া হওয়ার পর এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খুলতে চায়নি ঢাকা। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতেই সত্যি গোপন করছে ইউনূস সরকার, এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। ভারতের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে ঝগড়া করতে গিয়েই নিঃশব্দে বিপদকে কাছে টেনে আনলো ঢাকা। গত ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সীমান্ত সংলগ্ন মংডু শহর দখল নিয়েছে মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। চট্টগ্রাম সীমান্তে বয়ে চলা নাফ নদীর পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এই গোষ্ঠীটি। রোহিঙ্গা অধুষ্যিত রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এই মুহূর্তে সবথেকে বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের পূর্ব প্রান্তের দেশ মিয়ানমার। যেখানে এখন চলছে তীব্র গৃহযুদ্ধ। একদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অন্যদিকে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এমন মোট ৮টি...
Read more
Discussion about this post