মহাধুমধাম করে প্রচার করা হল যে, ইউনূস সাহেব চীনে যাচ্ছেন, ভাবটা এমন যেন চীন থেকে ফিরলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।এবং ভারতকে বিভিন্নভাবে যব্দ করা যাবে,এক কথায় টাইট দেওয়া আরকি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষরা কি সত্যিই বোকা, নাকি ভারত বিদ্বেষ তাদের অন্ধ করে দিয়েছে। ভুলে যাবেন না দেশটার নাম চীন।
চীনে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ধারণা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল এবং আলোচনার জন্ম হয়েছে। চীন, যাকে অনেক সময় “ঋণের দৈত্য” বলা হয় তাদের বৃহৎ ঋণনীতির জন্য, সেখানে ডঃ ইউনূসের সাম্প্রদায়িক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত ঋণের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মডেলটি একটি বিপরীতমুখী পন্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। চীনের ঋণদান নীতি ও ডঃ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মধ্যে একটি দারুণ ভিন্নতা বিদ্যমান, যেখানে একদিকে বৃহৎ ঋণ নেওয়ার প্রবণতা এবং অন্যদিকে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টা দেখা যায়।বাংলাদেশকে চীনের সাহায্য করার বিষয়টি আলোচনা করার আগে চীন সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।চীনের মোট ঋণের পরিমাণ তার মোট দেশজ উৎপাদনের, মানে জিডিপির প্রায় ৩০০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। চীনের কর্পোরেট সেক্টর এবং ব্যাংক ঋণের বিশাল সংখ্যক অংশ এই ঋণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। COVID-19 মহামারীর সময় ঋণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়, যা চীনের অর্থনীতির উপর গুরুত্বপূর্ণ চাপ সৃষ্টি করেছে।এই পরিস্থিতি সামাল দিতে চীন সরকার বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করছে, তবে ঋণের এই উচ্চ পরিমাণে দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের উপর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।অর্থাৎ যারা নিজেরাই অর্থনৈতিকভাবে বিদ্ধস্ত তারা অন্যকে কিভাবে উপরে তুলবে। কাবুলিওয়ালা চীন বিভিন্ন দেশকে ঋণ দেয় মূলত নিজেদের অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য। এটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সংক্ষেপে(BRI)-এর একটি অংশ, যার মাধ্যমে তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করে। এই প্রকল্পের আওতায় চীন মহাসড়ক, রেলপথ, বন্দর এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ঋণ প্রদান করে। বুদ্ধিমানেরা এই ঋণগুলোকে “ঋণের ফাঁদ” হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ, ঋণগ্রহীতা দেশগুলো প্রায়ই এই ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে। এর ফলে চীন তাদের কাছ থেকে কৌশলগত সুবিধা আদায় করে, যেমন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর বা অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। আর উল্টো দিকে থাকা দেশটি যদি দুর্বল হয়,তহলে তো কথাই নেই।উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর চীনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিতে বাধ্য হয়েছিল, শ্রীলঙ্কার সরকার। আসলে চীন এই ঋণগুলোকে তার অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত স্বার্থে ব্যবহার করে, যা অনেক সময় ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে চীন দাবি করে যে, তারা এই ঋণগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রদান করে, চীন বাংলাদেশকে সাহায্য করার পেছনে বেশ কিছু কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। চীন সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, যা তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর অংশ। এর মাধ্যমে চীন তার আন্তর্জাতিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, চীন বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ এবং ঋণ প্রদান করতে চাইছে, যেমন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ, শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন, এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা। এই বিনিয়োগগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হলেও, চীনের জন্য এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, অর্থাৎ বাংলাদেশে অস্থিতিশীল সরকার থাকায় তারা তাদের ফাঁদ পাতছে। এখানে চীন আসলে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতে চায়, যেমন ভারত মহাসাগরে তার উপস্থিতি শক্তিশালী করা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব বৃদ্ধি করা। জেনে নেওয়া যাক ভারতের কি কি সমস্যা হতে পারে।
প্রথমত কৌশলগত প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশে চীনের উপস্থিতি ভারতের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে, কারণ এটি দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
এটির সঙ্গে যেটি আসে সেটি হল বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা, চীন যদি বাংলাদেশের সাথে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করে, তা ভারতের সাথে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারে। সর্বশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্বে বাধা, চীনের ভূমিকা ভারতের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।
তবে বাংলাদেশের জন্য চীনের সাহায্যকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই বিনিয়োগগুলো দীর্ঘমেয়াদি এবং স্বচ্ছ উন্নয়নের জন্য কাজে লাগানো হয়, তবে এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি ইতিবাচক হতে পারে। ভারতের ক্ষেত্রেও, ইতিবাচক কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই পরিস্থিতিকে নতুন সুযোগে পরিণত করা যেতে পারে। এবার দেখে নেওয়া যাক আসল বিষয়, বাংলাদেশের কি কি লাভ এবং ক্ষতি হতে পারে। প্রথমে আসি কি কি লাভ হতে পারে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের রেলপথ, সড়ক, বন্দর ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ঘটাতে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।অর্থাৎ অবকাঠামোতে প্রভূত উন্নয়ন হবে।বিদেশী বিনিয়োগে চীনের সহায়তা আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে, যা শিল্পাঞ্চল এবং উৎপাদন খাতে প্রভূত বৃদ্ধি আনবে। সঙ্গে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।এবং শেষে চীনের উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কাজে লাগতে পারে। অর্থাৎ প্রযুক্তির দিকে বাংলাদেশ অগ্রসর হতে পারে।এবার আসি কি কি ক্ষতি হতে পারে। প্রথমত ঋণের বোঝা বৃদ্ধি, বড় প্রকল্পগুলোর জন্য নেওয়া ঋণ অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, এবং সময়মতো ঋণ পরিশোধের অক্ষমতা তৈরি হলে দেশের উপর কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা আসতে পারে।অর্থাৎ যে দ্বীপটি নিয়ে আমেরিকার আগ্রহ বেশী সেই সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি চীন লিজের নামে দখল নিতে পারে। সেক্ষেত্রে চীন এবং আমেরিকার মাঝে পড়ে চিড়ে চ্যাপটা হবে বাংলাদেশ।এরপরে আসবে চীনের অতিরিক্ত অর্থনৈতিক প্রভাব, যা বাংলাদেশের নীতি স্বাধীনতাকে সীমিত করতে পারে।চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কৌশলগত স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। পরিশেষে চীনা বিনিয়োগ এবং পণ্যের প্রবেশাধিকারে স্থানীয় ছোট শিল্প এবং ব্যবসার প্রতিযোগিতা কঠিন হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের খুদ্র শিল্প চিরত্বরে ধ্বংস হতে পারে । চীন বাইরে থেকে যা দেখায় আসলে তাদের ভিতরে অন্য রকম খেলা চলে। শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
Discussion about this post