পাকিস্তানের অবস্থা এখন এমন, যে ঘোমটা দিতে গিয়ে পিছনের কাপড় খুলে যাচ্ছে। পহেলগাঁও সন্ত্রাসবাদী হামলার দায় ভারত পুরোপুরি পাকিস্তানের ওপরই দিয়ে চলেছে। যা পাকিস্তান ক্রমাগত অস্বীকার করে চলেছে। কিন্তু ভারত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জোর গলায় বলেছেন, পহেলগাঁও হামলার বিরুদ্ধে ভারত কড়া পদক্ষেপ করবেন। আর সন্ত্রাসবাদীদের সাবধান করে তিনি বলেছেন, এমন শাস্তি দেওয়া হবে যা তাঁদের কল্পনাতীত। এরপর থেকে ভারত একের পর এক কড়া কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। প্রথমেই বাতিল হয় সিন্ধু জল চুক্তি।
এবার বাতিল হল ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্য। শনিবার নয়া দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিল, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সমস্ত বাণিজ্য বন্ধ। এমনকি ঘুরপথে ও লুকিয়ে যে বাণিজ্য চলে সেটাও এবার বন্ধ করবে ভারত। প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের কৃষিকাজ এবং ওষুধের বাজার বিশেষ ভাবে ভারতের উপরেই নির্ভরশীল। ফলে পাকিস্তানকে আরও বড় ধাক্কা দিলেন মোদি। সেই সঙ্গে ভারত পাক সীমান্ত এবং জম্মু ও কাশ্মীরের লাইন অফ কন্ট্রোলে ক্রমাগত সৈনসমাহার করে চলেছে। পাশাপাশি চলছে যুদ্ধ মহড়াও। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র, জ্যামার, রেডার সহ নানান যুদ্ধ সামগ্রী সেট করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্ট্রাটেজিক পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত যে কোনও সময় কড়া প্রত্যাঘাত করতে পারে পাকিস্তানের বুকে। এই পরিস্থিতিতে কার্যত নাজেহাল দশা পাকিস্তানের। তাঁরা ভারত সীমান্তে বড় আকারের সেনা সমাবেশ করছে। আর এর জন্য পাকিস্তানের অন্য প্রান্ত থেকে সেনাবাহিনীকে তুলে আনতে হচ্ছে কাশ্মীর, রাজস্থান, পঞ্জাব সীমান্তে। যার পূর্ণ সুযোগ নিল বালুচ লিবারেশন আর্মি।
এবার বালুচিস্তানের গোটা একটা শহর দখল করে নিল বালোচ আর্মি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, শুক্রবারই বালুচিস্তানের মাঙ্গোচর শহরের পূর্ণ দখল চলে গিয়েছে বালুচ বিদ্রোহীদের হাতে। কারণ, সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নিয়ে এসেছিল পাক সরকার। যার সুযোগ নিয়ে মাঙ্গোচর শহরে থেকে যাওয়া কিছু সেনা জওয়ান ও পুলিশকর্মীদের গ্রেফতার করে জেলে পুড়ে দেয় বালুচ বিদ্রোহীরা। তাঁরা করাচি-কোয়েটা হাইওয়ে দখল নিয়ে সমস্ত গাড়িতে তল্লাশি শুরু করে। পাক সংবাদমাধ্যমের খবর, শুক্রবার সন্ধেবেলা, কিছু সশস্ত্র মুখোশধারী ব্যক্তি মাঙ্গোচরে কোয়েটা-করাচি মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়। ওই দলটি ব্যক্তিগত গাড়ি এবং যাত্রীবাহী বাস সহ বেশ কয়েকটি যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে সশস্ত্র ব্যক্তিরা মাঙ্গোচর বাজারে ঢুকে বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন পুড়িয়ে দেয় এবং একটি ব্যাঙ্ক ও আদালতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এই বিষয়ে পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। যদিও জানা যাচ্ছে, পুনরায় ওই শহরের দখল নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছে পাক সেনাবাহিনী।
This is #Mangocher city of #Kalat district of #Balochistan where #Baloch freedom fighters attacked the main camp of #Pakistani military a few hours back, seized control of the main roads, took control of a bank & the court besides some other major buildings. Weapons of Pakistani… pic.twitter.com/l2TLBI9tmH
— Ajay Kaul (@AjayKauljourno) May 2, 2025
অন্যদিকে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন পহেলগাঁওয়ে হামলা চালানো জঙ্গিরা চেন্নাই হয়ে কলম্বো পালিয়ে যেতে পারে। সেটা জানার ভারত সরকার যোগাযোগ করে শ্রীলঙ্গা সরকারের সঙ্গে। এই খবর পেয়েই কলম্বোর বন্দরনায়েকে বিমানবন্দরে শুরু হয়ে যায় তল্লাশি অভিযান। শ্রীলঙ্কার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, চেন্নাই থেকে কলম্বোয় আসা একটি বিমানে ছয় সন্দেহভাজন জঙ্গি রয়েছে— এমনই সতর্কবার্তা এসেছিল ভারত থেকে। যদিও এই তল্লাশিতে সন্দেহজনক কাউকে ধরা হয়েছে কিনা সেটা জানায়নি কোনও পক্ষই। সূত্র বলছে, একদিকে যেমন পহেলগাঁও কাণ্ডে জড়িত জঙ্গিদের ধরতে চলছে চিরুনী তল্লাশি অভিযান, তেমনই ভারতীয় সেনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে। ফলে পাকিস্তান বুঝে গিয়েছে, এই মুহূর্তে ভারত কোনও ধরনের সামরিক অভিযান করলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বাধা অবশ্যম্ভাবী। আর তাতে আর্থিকভাবে দেউলিয়া পাকিস্তানের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিনতর কাজ হয়ে যাবে।
এই পরিস্থিতিতে পাক প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শান্তিদূত’ করে যদি ভারতকে প্রশমিত করা যায়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি নিজের সিদ্ধান্তে অনঢ়। এই আবহেও পাকিস্তানের মন্ত্রীরা কিন্তু ভারতকে হুমকি দিতে দমছেন না। যেমন, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের যে জল প্রাপ্য, তা আটকাতে ভারত কোনও বাঁধ তৈরি করলে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। যদিও পাকিস্তান যতই হম্বিতম্বি করুক না কেন। যুদ্ধের ভয়ে পাকিস্তানের একাধিক শহরে শাইরেন বসানোর কাজ শুরু করেছে পাক প্রশাসন। জানা যাচ্ছে, রাওয়ালপিন্ডি শহর জুড়ে ১৬টি আপৎকালীন সাইরেন বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে নজরদারি এবং উদ্ধারকাজের জন্য ৩৮টি চেকপয়েন্টও বসানো হয়েছে, যেগুলি সর্বক্ষণ সচল থাকবে।
Discussion about this post