বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকালে সব থেকে আলোচিত একটি বিষয় নির্বাচন। সে দেশে নির্বাচন কবে হবে? আদৌ কি হবে? এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে রয়েছে সংশয়। আবার নির্বাচন নিয়ে সড়ক হতে দেখা যাচ্ছে বিএনপিকে। কেন সরকারের তরফে চলতি বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর যদি পর্যন্ত পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নির্বাচন? প্রশ্ন বিএনপি’র। এবং সম্প্রতি জাপান সফরে গিয়েও অন্তর্ভুক্তির সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউসকে তার বক্তব্যে বলতে শোনা গিয়েছে, বাংলাদেশে একটি মাত্রই রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। নাম না উল্লেখ করলেও তিনি যে বিএনপি কে ইঙ্গিত করে এ কথাটি বলেছেন তা সকলের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু এবার সদ্য জাতীয় ঐক্যমত কমিটির বৈঠকে সে দেশের সিংহভাগ রাজনৈতিক দলই দ্রুত অর্থাৎ চলতি বছর ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি তুলেছে। অর্থাৎ দেশের নির্বাচন করাতে হবে, স্থায়ী সরকারের হাতে দেশের ক্ষমতা তুলে দিতে হবে বলে সুর চড়াচ্ছে একাধিক রাজনৈতিক দল।
সাম্প্রতিককালে প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস দাবি করে আসছিলেন দেশে বিএনপি ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দলে দ্রুত নির্বাচনের জন্য এগোচ্ছে না কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা যেখানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক এখন সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন নিয়ে সরব হচ্ছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আলোচনা শুরু হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির।
এদিন আলোচনা শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু ও নিজেদের অবস্থানের স্পষ্ট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের বৈঠকে অংশ নেয়। আলোচনা শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। আগেই জরুরি ভিত্তিতে যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নির্বাচনমুখী, সেই সংস্কারগুলো চিহ্নিত করে আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়ন করি। এমন কোনো সংস্কার নেই, যেগুলো এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’
সংবিধান সংশোধন ছাড়া অন্য সব সংশোধন, যেগুলোর বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাবে সবাই একমত, সেগুলো নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার মতো একটিও কারণ উল্লেখ করার মতো নেই।
এক্ষেত্রে,জামায়াতে ইসলামী যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। জামাতের তরফে আরো বলা হয় কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, প্রথমত সংস্কার। জুলাইয়ের ভেতরে এ সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। অনেক বিষয় ঐকমত্য হয়েছে। কিছু বিষয়ে সামান্য দ্বিমত আছে বিভিন্ন দলের মধ্যে।
এই নির্বাচন প্রসঙ্গে জুলাই সনদ ঘোষণার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিপক্ষে অবস্থান করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। দলটির তরফে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৈঠক শেষে সাংবাদিক দের বলেন, সরকারকে সময় দিতে চাই সব রাজনৈতিক দল মিলে। দুই মাসের মধ্যে আমাদের জুলাই সনদ, যেখানে জনগণ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ শাসনের রূপরেখা, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা দেখতে পারবে। সেই জুলাই সনদ হওয়ার পরে সরকার যাতে নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করে, সে আহ্বান আমরা জানিয়েছি। জুলাই সনদ হওয়ার পরে নির্বাচন সময়কাল নিয়ে আমাদের দলীয় মন্তব্য প্রকাশ্যে আনবো।
অর্থাৎ, এই বৈঠকের আলোচনায় অংশ নেওয়া বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছে। কোন দল বলছে, প্রধান উপদেষ্টা যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলেছেন, কিন্তু সেটা কোন মাসে হবে, তা ঘোষণা করা উচিত। আবার কোনও দল ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার পর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে অন্তরগতি সরকারকে।
Discussion about this post