ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন এক উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেটি ভারতের ভবিষ্যৎ ভূরাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ভারত এবং জাপানের মধ্যে যে চুক্তি গুলি সম্পন্ন হল সেগুলি ভারতের সামাজিকঅবস্থান অর্থনীতি, রাজনীতি সবকিছুকেই পরিবর্তিত করতে পারে আন্তর্জাতিক স্তরে। জাপান গোটা বিশ্বে সর্বাধিক জিডিপির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত একটি দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে জাপানে চালের জোগান হ্রাস পেলে, আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভারতকে আবেদন জানায় জাপান।
বর্তমানে জাপানে চালের মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে জাপানের ৫ কেজি চালের দাম ২৯ ডলারেরও বেশি। অর্থাৎ এক মাসে চালের দাম প্রায় দ্বিগুন। যেটি জাপানের অর্থনীতিতে ভয়ংকর সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে জাপান কে রক্ষা করতে পারে একমাত্র ভারত এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই মুহূর্তে জাপানে চাল সরবরাহ করছে আমেরিকা, থাইল্যান্ড এবং চিন। কিন্তু এই দু তিনটি দেশ যে পরিমাণে জাপানে চাল সরবরাহ করছে সেটি জাপানের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে এই মুহূর্তে জাপানের এই সংকট লাঘব করতে সক্ষম ভারত। তবে এই বিষয়ে ভারতও সম্মত। কারণ জাপান সেভেন সিষ্টার্সে ভারতের সাথে এমন কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করল যেগুলি, ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। বিশ্লেষকরা আরো বলছেন যেখানে জাপানকে পরিচালনা করার চেষ্টা করে আমেরিকা অর্থাৎ জাপানে চাল সরবরও করে আমেরিকা, সেখানে বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যখন জাপানে চাল সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতের আর হ্রাস পেয়েছে আমেরিকার। এটাই ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এছাড়াও দেখা গিয়েছিল এর আগে মূল্য বৃদ্ধি হ্রাস করার জন্য জাপান সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান থেকে অতিরিক্ত চাল আমদানি করা এবং সরবরাহের চাপ কমাতে জরুরি চালের এক তৃতীয়াং মজুদ ছেড়ে দেওয়া। এরপরও জাপানের এই সংকট না মিটলে ভারতই একমাত্র আশার আলো হয়ে দাঁড়ায় জাপানের পাশে। অর্থাৎ ভারতে তর্কের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয় জাপানে যেই ধরনের চাল আমদানি হয় সেই চালই জাপানের রপ্তানি করবে ভারত। এক কথায় জাপানের পাশে দাঁড়াতে উদ্যত ভারত।
কারণ এর ফলে বেশ কিছুটা লাভবান হচ্ছে ভারত। জাপানের সঙ্গে পোস্টার্সে এমন কিছু ব্যক্তি করা হলো যেহেতু পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ও চীনের ঘুম উড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। যেমন জাপানের সঙ্গে আমেরিকার চাল সরাবরাহ সংক্রান্ত যে চুক্তি ছিল তার মাঝে ভারত ঢুকে পড়ে, ভারতের ওপর জাপানের নির্ভরশীলতাকে স্পষ্ট করল। পাশাপাশি ভারত যেমন জাপানের পাশে দাঁড়িয়েছে তেমন গত মাসেই দেখা গিয়েছিল ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চল এর সাতটি রাজ্য সেভেন সিস্টার্সের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছিল জাপান।জাপান উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ২২,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছে , যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো, জল সরবরাহ, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীববৈচিত্র্য। এর মধ্যে ৮৮০ কোটি টাকার “উত্তর-পূর্ব সড়ক নেটওয়ার্ক সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্প” আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি প্রধান উদ্যোগ। এই বিনিয়োগগুলি ভারতের “অ্যাক্ট ইস্ট নীতি”-এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে কাজ করে। আর এই ধরনের বিনিয়োগ এক লহমায় ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। কারণ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের প্রধান টার্গেট ছিল ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য। ভারতের সেভেন সিস্টার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানারকম বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন মোহাম্মদ ইউনুস। তার অভিযোগ ছিল সেভেন সিস্টার্সের নাগরিকদের জন্য ভারত সরকার যথাযথ কোন ব্যবস্থা করছে না তার ফলেই এই এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু সমস্ত বিপক্ষে কিছু নিতে চাই ভারত সরকার জাপানের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে সেভেন সিস্টার্সের জন্য জাপানের তরফে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করে, আন্তর্জাতিক স্তরে এক উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করল ভারত। যার ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশ কার্যত অনেকটাই পিছিয়ে পড়লো।
Discussion about this post