ভাষা আন্দোলনের জন্য স্মরণীয় বাংলাদেশ। যা শুধু বাংলাদেশে পালিত হয় না সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করা হয়। সেই আন্দোলনের শহীদদের সম্মান জানানোর অনুষ্ঠান অবাক করে সারা বিশ্বকে। কিন্তু এই মহুর্তে অন্য আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। শুধু উত্তাল নয়, যা এক প্রকার ভীষণ সংঘর্ষের রূপ নিয়েছে, ফলে দিন দিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এবার সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ।যতদুর জানা যাচ্ছে পুলিশ এবং দেশের শাসকদল আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ঠিক কত তা বলা সম্ভব নয়। ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে মৃত এবং আহতের সংখ্যা।
এই পরিস্থিতিতে সংরক্ষণ নিয়ে মামলা আগামী রবিবার শুনবে বাংলাদেশের আদালত। তার আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল জনগনকে শান্তি বজায় রেখে কোর্টের রায়দান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। এবং কোর্ট সঠিক রায় দেবেন এই আশা রাখতে বলেছেন।এখন প্রশ্ন বাংলাদেশে সংরক্ষণ নিয়ে কেন এত ক্ষোভ? কেনই বা সেই পদ্ধতিতে বদল আনতে আন্দোলন চলছে? স্বাধীনতার সময় থেকেই সংরক্ষন চালু রয়েছে বাংলাদেশে। মুক্তিযোদ্ধা, এবং তাদের পরিবারের জন্য চাকরিতে আলাদা আসন সংরক্ষিত থাকে।
এ ছাড়া, সংরক্ষণের সুবিধা পান নারী, সমাজের পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীরাও। পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের জন্যও কিছু সংরক্ষণ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। আর এ ভাবে মোট ৫৬ শতাংশ আসনই চলে গিয়েছে সংরক্ষণের খাতায়। বাকি মাত্র ৪৪ শতাংশ আসন রয়েছে সাধারণের জন্য। সেখানে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে থাকে। এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশের কলেজ পড়ুয়ারা । প্রথম যে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, তাতে মেধার ভিত্তিতে মাত্র ২০ শতাংশ নিয়োগের সুযোগ ছিল। বাকি ৮০ শতাংশই ছিল সংরক্ষিত আসন। তার মধ্যেই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের সংরক্ষণ ব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁদের সন্তানদেরও যুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০০২ সালে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ আসনে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধার ভিত্তিতে তাতে নিয়োগ হবে। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এই নির্দেশ বাতিল করা হয়। এবং বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ আসন পূর্ণ করা না গেলে তা খালি রাখা হবে। ২০১১ সালে শেখ হাসিনা সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পাশাপাশি তাঁদের নাতি-নাতনিদেরও সংরক্ষণ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১২ সালে তার সঙ্গেই যুক্ত হয় এক শতাংশ প্রতিবন্ধী সংরক্ষণ।সংরক্ষণের জন্য এত বেশী শতাংশ আসন বরাদ্দ করায় জনগণের মধ্যে প্রথম থেকেই চাপা অসন্তোষ ছিল।
পরে তা আন্দোলনের রূপ নেয় আর সেই আন্দোলনের চাপে পড়ে সংসদে দাঁড়িয়ে সব ধরনের সংরক্ষণ বাতিলের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। কিন্তু সংরক্ষণ বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে যায় কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বাংলাদেশ আদালত তাঁদের পক্ষে রায় দেয়। ফলে আবার আগের মতো সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়ে যায় বাংলাদেশে। হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে হাসিনা সরকার। তার মাঝেই চলতি মাসে দেশ জুড়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। আর সেই আন্দোলনে আবার উত্তাল ভারতের প্রতিবেশী দেশ।
Discussion about this post