মধ্যরাতে ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তার আগে এক বিক্ষোভ জমায়েতের আয়োজন করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। সেখানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীগুলির জল বন্টন নিয়ে চাপ তৈরির দাবি ওঠে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর পড়ুয়াদের একাংশ স্পষ্ট ভারত-বিরোধী নানান স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখালেন। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় এথন রীতিমতো ভাইরাল।
জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের এক সাংবাদিক এই ভিডিও সমাজ মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন। ওই ভাইরাল ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, হ্যান্ড মাইক হাতে একজন নানা ধরণের ভারত-বিরোধী স্বোগান দিচ্ছেন, আর অন্যান্য পড়ুয়ারা তাঁর সুরেই গলা চড়াচ্ছেন। স্লোগানগুলি হল, “দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা”। “ভারতের অগ্রাসন, ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও”। “ভারতের দালালরা, হুঁশিয়ার-সাবধান”। “পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়তে হবে ভারত ভক্তি”, “বন্যায় যদি মানুষ মরে, সেভেন সিস্টার থাকবে না রে”। “আমরা সবাই বাবর হবো, সেভেন সিস্টার স্বাধীন করবো”, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সম্প্রতি বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের একাংশে দাবি উঠছে, এই বন্যার জন্য ভারত দায়ী। কারণ, ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধ, বা পশ্চিমবঙ্গের গাজোলডোবা, ফারাক্কা বাঁধের স্লুইস গেট বাংলাদেশকে না জানিয়ে খুলে দেওয়ার জন্যই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজ মাধ্যমে এই ধরণের দাবিতে বিভিন্ন ধরণের পোস্ট ছেয়ে গিয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, ভারতকে সায়েস্তা করতে ফারাক্কা বাঁধের অদূরে আরও একটি বাঁধ নির্মান করতে হবে। যাতে উল্টো পথে নদীর জল ভারতেই পাঠিয়ে দেওয়া যায়। এই ধরণের অবান্তর দাবি বাংলাদেশের মানুষজন রীতিমতো ভাইরাল করেছেন। এই আহবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর জলের সুষম বন্টনের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে মিছিল শুরু হয়। যা মাঝরাত পর্যন্ত চলে। এই মিছিলেও স্লোগন উঠেছিল, “দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা”। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না, রাজসাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয় বলে জানা যাচ্ছে। যা নিয়ে সিঁদূরে মেঘ দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় আওয়ামী লিগের সরকার ছিল। ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লিগ এবং তার নেত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্ক বরাবরই ভালো ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামাত আবার বরাবরই ভারত বিরোধী বলে পরিচিত। যদিও বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর সেখানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার গঠিত হয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুস। এই তদারকি সরকারে সরাসরি বিএনপি বা জামাতের মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা নেই। তবুও বাংলাদেশে যে ভারত বিরোধী একটা চক্র মাথাচাড়া দিচ্ছে, এবং তা প্রতিরোধ বা দমন করার কোনও সদিচ্ছা এখনও দেখা যাচ্ছে না, সেটাই তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যার জন্য যে ভারত কোনও ভাবেই দায়ী নয়, সেটা ভারতের বিদেশমন্ত্রক স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে। তবুও বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সেটা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে, ভারত বিরোধী স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীদের একাংশও এখন ভারত বিরোধীতায় উঠেপড়ে লেগেছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই দাবি করছেন, বাংলাদেশের বন্যা প্রাকৃতিক কারণে নয়, বরং ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে নদীবাঁধ খুলে দিয়ে। এমনকি এই সমস্ত নদীবাঁধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবিও উঠছে। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, সেটা ভারতের কাছে ভালো লক্ষণ নয়। একদিকে বিএনপি শেখ হাসিনাকে সত্বর বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের দাবি জানাচ্ছে, অন্যদিকে ভারত বিরোধিতার স্লোগন তুলে জনমত গড়ে তুলছে। এখন দেখার এই পরিস্থিতি ভারত সরকার কিভাবে মোকাবিলা করে।
Discussion about this post