গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ঘটে গিয়েছে রাজনৈতিক পালাবদল। গণ অভ্যুত্থানের মুখে পড়ে দেশ ছেড়েছিলেন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর লাগাতার অত্যাচারের পাশাপাশি ভেঙে পড়েছে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। ভঙ্গুর অর্থনীতির জেরে মূল্যবৃদ্ধি মাত্রা ছাড়িয়েছে। এইসঙ্গে সাধারণ মানুষের উপর বেড়েছে কট্টরপন্থীদের অত্যাচার। বাংলাদেশ জুড়ে মাথা চারা দিয়েছে জঙ্গিবাদ। সব মিলিয়ে ফলে গরিব থেকে মধ্যবিত্ত, বাংলাদেশের আমজনতা বিরক্ত। তাঁদের বিরক্তি আরও বাড়িয়েছে সদ্য গজিয়ে ওঠা কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি হোক বা এবি পার্টি। তরুণ ছাত্র নেতাদের নিত্য নৈমত্তিক আস্ফালন, অযৌক্তিক আবদারে অতিষ্ট ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। এবার কয়েকজন ছাত্র নেতার টার্গেটে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ বা ব্যারিস্টার ফুয়াদ। বিগত কয়েকদিন ধরে তাঁরা লাগাতার কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করে চলেছেন সেনাবাহিনী এবং সেনাপ্রধানকে। এর জেরে সাধারণ মানুষের মতোই ক্ষেপে উঠেছে সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা। ফলে বাংলাদেশে যে কোনও মুহূর্তে একটা গৃহযুদ্ধ লেগে যেতে পারে। এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পদ্মাপাড়ে।
গত শনিবার থেকে আমরা দেখলাম, ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় শহরে সেনা তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা ও আশেপাশের ক্যান্টনমেন্টগুলিতে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ সেনা দখল নিতে শুরু করেছে ঢাকার রাস্তাঘাট। এখন প্রশ্ন হল, হাসনাত, আসিফ বা ব্যারিস্টার ফুয়াদরা কি থেমেছেন? পরপর তিনদিন সেনাপ্রধান যে ম্যারাথন বৈঠক করে গেলেন, তার ফলাফল কি। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, এই ছাত্রনেতাদের যারা বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত ইস্কানি দিয়ে চলেছেন। একের পর এক কুমন্ত্রণা দিয়ে তাঁদের উত্তেজিত করছেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি একসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। যদিও বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক নিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে মুখ খুললেন না বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। তবে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম একাধিক সেনা সূত্র উদ্ধৃতি দিয়ে ওই বৈঠকের নির্যাস জানিয়েছে। সোমবার অফিসার্স অ্যাড্রেস নামে এক মেগা বৈঠক ডেকেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। সেখানে সেনাকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সেনাপ্রধান বাহিনীর সকলকে নতুন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তবে নতুন পরিস্থিতি বলতে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন ভাষণে, তা ব্যাখ্যা করেননি তিনি। স্বভাবতই বাংলাদেশ জুড়ে জল্পনা শুরু হয়েছে ওয়াকার উজ জামানের কথায়। কেউ কেউ বলছেন, চলতি পরিস্থিতি বিচার করে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আগাম আভাস দিয়েছেন ওয়াকার উজ জামান। অন্য দিকে, আরেকটি দল মনে করছে আগামী দিনে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত করেছেন সেনাপ্রধান। সেনাপ্রধান নিজে যেমন মুখ খোলেননি, তেমনই সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী শাখা বা আইএসপিআর কোনও প্রেস বিবৃতি জারি করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়া বলছে, ওই বৈঠকে দেশে ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়ানো নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেছেন একাধিক সেনাকর্তা।
জেনারেল ওয়াকার সমস্ত সেনাকর্তাদের ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামলানোর ডাক দিয়েছেন। জানা যাচ্ছে, সোমবারের মেগা বৈঠকে সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু দেশে কোনও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি। অনেকে নানা ভুল তথ্য, অপতথ্য নানা ভাবে ছড়ানো হচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। পরিস্থিতি সামলাতে হবে ধৈর্যের সঙ্গে। সেনাবাহিনীর কাছে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেশ ও দেশের জনগণ। উস্কানিদাতাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়, এমন কিছু করা যাবে না বলেও সেনাকর্তাদের সতর্ক করেন সেনাপ্রধান। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মূলত কিভাবে দ্রুত নির্বাচন করিয়ে দেশে একটা গণতান্ত্রিক সরকার স্থাপন করা যায় সেই রূপরেখাও স্থির করা হয়েছে সেদিনের বৈঠকে। তবে নতুন পরিস্থিতি বলতে ইউনূস সরকারকে সরিয়ে নতুন কোনও ব্যবস্থা কায়েম করার কথাও বলতে চেয়েছেন জেনারেল ওয়াকার উজ জামান।
Discussion about this post