নয়া সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আড়ালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে মুহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইউনূস সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, সোমবার রাতে এক নির্দেশনামা জারি করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, তাতে আওয়ামী লীগের নিবন্ধনই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, জাতীয় নাগরিক পার্টি-সহ আরও কয়েকটি ছোটখাটো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিকে সম্প্রতি তাঁদের আন্দোলন তীব্রতর করেছিল। মূলত তাঁদের চাপেই তড়িঘড়ি আওয়ামী লীগের যাবতীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যা নিয়ে ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিসর সঙ্কুচিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, আমরা আশাবাদী, দ্রুত বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
অপরদিকে, আওয়ামী লিগকে নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার জবাবও দিয়েছে বাংলাদেশ। সে দেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, আওয়ামী লীগের ব্যাপারে বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল ঐক্যমত পোষন করেছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকেও সমর্থন এসেছে।
পরে তিনি এক ফেসবুক পোস্টে ভারতের মন্তব্য সম্পর্কে লেখেন, আমরা দেখেছি যে আওয়ামী লিগের ১৫ বছরের দীর্ঘ অত্যাচারী ও দুর্নীতিপরায়ণ শাসনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক পরিসর কঠোরভাবে সংকুচিত করেছে এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করা হয়েছে। এই দলের মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে যে ক্ষতিগুলি হয়েছে, তা এখনও তাজা। আমি ইতিমধ্যেই বলেছি যে এই দলের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি। যাতে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত থাকে। জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা প্রদান করা যায়।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লিগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হোক, চায় না নয়াদিল্লি। এই প্রসঙ্গেও বাংলাদেশের মনোভাব জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফেসবুক পোস্টে তাঁর ব্যাখ্যা, নির্বাচন নিয়ে, আমরা মনে করতে পারি, কীভাবে আওয়ামী লিগ বারবার নির্বাচন হাস্যকর করে তুলেছিল। দলট আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলি রঅপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে। আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে একটি সংস্কারের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে তিনি এটাও জানান, নির্বাচন সম্পূর্ণরূপে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অর্থাৎ ঢাকার বক্তব্য, ভারত যেন এই বিষয়ে নাক না গলায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারত সরকারের বক্তব্যে স্পষ্ট, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। অর্থাৎ, সে দেশে বর্তমান যে সরকার রয়েছে তাঁরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করছে না। ফলে নির্বাচন করানোটা জরুরি। কূটনৈতিক পরিভাষায় ভারত বলতে চেয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন কোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে করাতে হবে। এখানেই আপত্তি বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। গত বছরের জুন-জুলাই মাসের গণ অভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কোমর ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েকমাসে শেখ হাসিনা ভারত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যে ভাবে ইউনূস সরকারকে আক্রমণ করে চলেছেন। তাতেই রাতের ঘুম উড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির মতো সদ্য গজানো রাজনৈতিক দলের। তাই তাঁরা সরকারকে চাপ দিয়ে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন দলের নিবন্ধন বাতিল করালো। এখন এই বিষয়ে ভারত কোনও রকম চাপ সৃষ্টি করে কিনা, বা সরাসরি বাংলাদেশ সরকারকে কোনও নির্দেশ দেয় কিনা সেটাই দেখার। উল্লেথ্য, ইতিমধ্যেই ভারত যে ভাবে অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে পাকিস্তানের কোমর ভেঙেছে তাতে কিছুটা হলেও চাপে আছে বাংলাদেশ।
Discussion about this post