অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের তৎকালীন পিএ আতিক মোর্শেদের বিরুদ্ধে উঠল গুরুতর অভিযোগ। বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাঙ্কিং সংস্থা নগদের ১৫০ কোটি টাকা বেহাতের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নগদের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্ত্রী-সহ বহু নিকট আত্মীয়কে চাকরি দেওয়ার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। জানা যাচ্ছে, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে পদত্যাগ করার পর আতিক মোর্শেদ বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের পিএ হিসেবে কর্মরত। অর্থাৎ তিনি এখনও যথেষ্ট প্রভাবশালী পদে রয়েছেন। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন এক ফেসবুক পোস্টে এই অভিযোগ আনার পাশাপাশি নাহিদ ইসলামের প্রতিও সন্দেহের তির ছুঁড়েছেন। সবমিলিয়ে বলা যায়, ধীরে ধীরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা-সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে এবার দুর্নীতির তথ্য-প্রামান সামনে আসতে শুরু করেছে। এমনকি বেআইনি লেনদেনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নামও সামনে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে চুপ দুর্নীতি দমন কমিশন ও গোয়েন্দা পুলিশ।
বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরকারের বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমান দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আসছিল আওয়ামী লীগ নেত্রী তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এমনতর অভিযোগ আনছিলেন বিএনপি-সহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বও। কিন্তু বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ অথবা সেনাবাহিনী এই বিষয়ে চুপ ছিলেন। অভিযোগ, তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের জন্যই নাকি পুলিশ চোখ বন্ধ করে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরাসরি অ্যাকশনে অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বা ডিবি পুলিশও সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। উল্লেখ্য, আতিক মোর্শেদের পাশাপাশি আরও কয়েকজনের নাম এই আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম নগদের ডেপুটি সিইও মুয়ীজ নাসনিম ত্বকিকে। তাঁকে গত ১৮ মে রাতে তাঁর বেইলি রোডের বাড়ি থেকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে আটক করা হয়েছিল একাধিক মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার-সহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরদিন বিকেলে বিভিন্ন দেনদারের তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে ডিবি থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, তাঁকে ছেড়ে দিতে তদারকি সরকারের উপর মহল থেকে চাপ এসেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের শীর্ষকর্তাদের কাছে। সরাসরি নাম আসে আতিক মোর্শেদের। তবে অনেকেই মনে করছেন, তদারকি সরকারের অন্দরেই কেউ বা কারা আতিক মোর্শেদদের মদত দিয়ে যাচ্ছে। ফলে গোয়েন্দা পুলিশ ১৫০ কোটি টাকা তছরূপের ঘটনার তদন্ত শুরু করেও থেমে যায়। ফলে প্রশ্ন উঠছে, কারা এদের পিছন থেকে মদত দিচ্ছেন, কারাই বা এদের নগদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার দায়িত্বপূর্ণ পদে বসালেন?
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন তাঁর ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, নগদ ভবনের ৬ তলার একই রুমে নিয়মিত অফিস করছেন আতিক মোর্শেদ। অথচ আতিক মোর্শেদ নগদের কোন কর্মকর্তা নন। এমনকি আতিক মোর্শেদ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তার স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে নগদের ম্যানেজার কমপ্লায়েন্স পদে বসিয়েছেন। তাছাড়া চাকরি দিয়েছেন অনেক নিকট আত্মীয়দের। তাঁর প্রশ্ন, নাহিদ ইসলাম কি পারবে এসবের দায় এড়াতে? তাঁর সাবেক পিএ আতিক মোর্শেদকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে? অবশ্যই পারবেন না। কারণ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উচ্চপদে বসে বিপুল পরিমান আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির একাধিক নেতা। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের আঁতস কাঁচের নিচে এসে গিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির একাধিক নেতা ও সংগঠক। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও ইতমধ্যেই চাঁদাবাজি ও তোলাবাজির জন্য গ্রেফতার করেছে কয়েকজনকে। যেমন গত বৃহস্পতিবারই চাঁদাবাজির অভিযোগে সেনাবাহিনীর হাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির পার্বতীপুরের সংগঠক তারিকুল ইসলামকে। এমন আরও উদাহরণ রয়েছে। ফলে জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না পেলেও তাঁরা যে ইতিমধ্যেই ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে রয়েছেন তা এখন প্রমানিত। আর অপরাধ করেও সাত খুন মাফ হচ্ছে তাঁদের। তদারকি সরকারের অভ্যন্তর থেকেই কেউ কেউ অদৃশ্যে তাঁদের ঢাল হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। ফলে এমন ১৫০ কোটি টাকা দূর্নীতির অভিযোগ সামনে এলেও সামনে আসেনি আরও কয়েকশো কোটি দুর্নীতি। যা আাগমীদিনে বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
Discussion about this post