বাংলাদেশে এখন সবথেকে বড় আলোচনার বিষয় হল, নির্বাচন ইস্যু। কবে হবে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন? জুনেও নাকি নির্বাচন হচ্ছে না। উপদেষ্টা মন্ডলীর মধ্যে থেকে অন্তত পাঁচ জন উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে এমন তথ্যই তুলে ধরছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এছাড়াও বিদেশ থেকে ইউনূসের উপর প্রবল চাপ আওয়ামী লীগকে নিয়ে। তবে কি ইউনূসকে জব্দ করতেই শেখ হাসিনা চাপ বাড়াচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রকে কাজে লাগিয়ে? রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, প্রত্যেকেই বলছেন, ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল বা জুন…এই সমকালে নির্বাচন হবে না বাংলাদেশে। কি তত্ত্ব খাড়া করছেন তারা, চলুন আলোচনা করা যাক।
এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, সেই বিষয় নিয়ে সবাই বুঝতে চায়। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপান, চিন সহ প্রত্যেকের ভাবনা এক। চিন বিএনপি, জামাত ই ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টির বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে বেজিং এ কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাদের বৈঠকের আয়োজন করেছে। বিএনপির মহা সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন এরই মাঝে চিন সফর করেছেন এবং সেখানে বৈঠকও করেছেন। এবং সেই মিটিং থেকে তারেক রহমানকে চিন সফরের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন কূটনীতিক আলাপকারী বলেছেন, লন্ডনে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের আবাস পাওয়া গিয়েছে। তবে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে নির্বাচনের সময় নিয়ে যথেষ্ট মত বিরোধ রয়েছে। লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এনসিপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপের উল্লেখ করে একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত গণমাধ্যমকে বলেছে, উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দেখছেন না একেবারেই। এমনকি পাঁচ জন উপদেষ্টা নাকি, ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছেন না। এমনকি জুনেও নির্বাচনের সম্ভাবনা কম দেখছেন তারা। দুজন উপদেষ্টা নাকি মনে করেন, জুনে নির্বাচন না হলে সরকারের খুব একটা ক্ষতি হবে না। এমনকি জামাত ই ইসলামী, এনসিপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়। এমনকি একটি দেশের রাষ্ট্রদূত প্রশ্ন তুলেছেন, আওয়ামিলীগ একটি বড় দল। তাদের কোটি কোটি সমর্থক রয়েছে। দলের কিছু দুর্নীতি এবং কিছু নেতার সাজার জন্য দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলে, নির্দোষদের কি প্রার্থী হিসাবে দেখা যাবে? যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে বোঝায়, কোনও দলের থাকা বা না থাকা, তাহলে দলটির কোটি কোটি সমর্থকের মতামত ও নির্বাচনে কিভাবে প্রতিফলিত হবে, সেই প্রশ্নটাও উঠেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক ১৬ই জুন মানবাধিকার কাউন্সিলের বক্তব্যে, তিনি এই বিষয়টি বলেছেন। এবং আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলির স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। এই কর্মকাণ্ডে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। অর্থাৎ অনেকেই বলছেন, এখানে আওয়ামীলীগকে নিয়ে নির্বাচনের কথাই তিনি বলেছেন। এদিকে পূর্ব এশিয়ার হয়ে ছয় বছর আগে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এক কূটনীতিক নীরবে নাকি ঢাকা সফর করে গিয়েছেন গত সপ্তাহে। তার সফরে সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তার প্রশ্ন, এপ্রিলের নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে কেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা আসলো? ভারতে অবস্থানকারী শেখ হাসিনার প্রভাব কি ওই নির্বাচনে থাকবে? অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে বিদেশী ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে থাকছেই। আসলে এখানে দুটো জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক হল, বাংলাদেশের দুজন নারী উপদেষ্টা সহ পাঁচ উপদেষ্টার মন্তব্য জুনে নির্বাচন না হলেও সরকারের খুব একটা ক্ষতি হবে না, আর একটি বিষয় হল, বিদেশি রাষ্ট্রদূত থেকে একাধিক ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি শেষমেষ আওয়ামী লীগকে নিয়েই নির্বাচন করতে বাধ্য হবে?
Discussion about this post