ইরান ও ইজরায়েলের ক্রমবর্ধমান সংঘাতের মধ্যে তেহরান থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ঠিক হয়েছে প্রথমে তাঁদের তেহরান থেকে স্থলপথে ইরান-পাকিস্তান সীমান্তে আনা হবে। এরপর পাকিস্তান থেকে আকাশপথে বাংলাদেশে আনা হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ইরানে হামলা হওয়ার পর থেকেই ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। তাহলে কিভাবে বাংলাদেশিদের সেই সীমান্ত ব্যবহার করে ফেরত আনবে বাংলাদেশের সরকার? কেউ কেউ বলছেন, অনেকগুলি বিষয়ের মতো, এই ক্ষেত্রেও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তবর্তীকালীন সরকার।
যুদ্ধবিদ্ধ্বস্ত ইরান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ‘অপারেশন সিন্ধু’ শুরু করেছে ভারত। ইতিমধ্যেই ১১০ জন শিক্ষার্থী নয়া দিল্লি পৌঁছে গিয়েছে। উল্লেখ্য, ইরানে ৪ হাজারেরও বেশি ভারতীয় নাগরিক বসবাস করেন এবং তাদের অর্ধেকই শিক্ষার্থী। ভারত অপারেশন সিন্ধু শুরু করার ঠিক আগেই তেহরানের কেশাভার্জ স্ট্রিট এলাকায় একটি মেডিকেল ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়েছিল ইজরায়েলি মিসাইল। তাতে কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। দিল্লিতে ইরানি দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিছু শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তেহরানে ভারতীয় মিশনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। ভারতেরও বিদেশ মন্ত্রক দ্রুততার সঙ্গে ইরানে বসবাসকারী ভারতীয়দের চিহ্নিত করে নিরাপদে বের করে আনার কাজ শুরু করে দেয়। তাঁদের ইরানের বিভিন্ন শহর থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর্মেনিয়া সীমান্তে। সেখান থেকে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে। সেখান থেকে বিমানে করে নয়া দিল্লি আনা হচ্ছে ভারতীয় নাগরিকদের। ১৮ জুন দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ১১০ জন ভারতীয় শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি বিশেষ বিমান ইয়েরেভান ত্যাগ করেছিল। যা সেদিনই নয়া দিল্লিতে এসে পৌঁছয়। এরপর শিক্ষার্থীদের নিজের রাজ্য ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি। ফলে তাঁরা নিরাপদে ফিরে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
ভপরদিকে ক্রমাগত ইজরায়েলী হামলায় প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া ইরান থেকে ভারত যখন তাঁদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে শুরু করে দিয়েছে অপারেশন সিন্ধুর মাধ্যমে। তখন বাংলাদেশ পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছিল তাঁরা অপারগ। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন। ইরানে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য তাঁরা উদ্বিগ্ন। তবে এখনই তাঁদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
এই মন্তব্যের পরই ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে বাংলাদেশে। ফলে তড়িঘড়ি উদ্যোগী হতে হয় অন্তর্বর্তী সরকারকে। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এই বিষয়ে। পাকিস্তান রাজি হয়েছে সহায়তা করার ব্যাপারে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, তেহরানে ৪০০ জনের মতো বাংলাদেশির মধ্যে এ পর্যন্ত ১০০ জন যোগাযোগ করেছেন। এখন তাদের কীভাবে কোন পথে ফেরানো যায়, সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে ফেরত আনার অংশ হিসেবে পাকিস্তান কিংবা তুরস্কে নেওয়া হতে পারে। সব মিলিয়ে যে দেশ থেকে ফেরানো সুবিধা তৃতীয় ওই দেশ থেকে লোকজনকে দেশে ফেরানো হবে। তবে আপাতত ইরানের বাংলাদেশি দূতাবাস হটলাইন চালু করেই দায় সেরেছে বলে দাবি। কারণ, বর্তমানে ইরানে ইন্টারনেট বন্ধ আছে, টেলিফোন যোগাযোগও অথৈবচ। ফলে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০০ জনের মতো যোগাযোগ করতে পেরেছেন। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারেনি বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মীরা। উল্লেখ্য, ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি।
এই আবহেই জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র ভারতীয়দের জন্য আকাশসীমা খুলে দিল ইরান। ইরান থেকে নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য যে অপারেশন সিন্ধু চালু করেছে ভারত। সেই বিমান যাতে উড়তে পারে, তার জন্যই এই পদক্ষেপ ইরানের। সে দেশে আটকে পড়া অন্তত ১০০০ ভারতীয় আগামী ২ দিনের মধ্যে ভারতে ফিরে আসতে পারেন। সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ইরান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে আসা প্রথম ফ্লাইট শুক্রবার রাত ১১টায় নামতে পারে ভারতে। শনিবার সকালে এবং সন্ধ্যায় আরও ২টি বিমান আসতে পারে।
Discussion about this post