গত বছর জুলাই আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন আওয়ামী লীগ দলটির কার্যকলাপ নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিক দল হিসাবে পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহনে নিষেধাজ্ঞা আরপের পর নয়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। কিন্তু এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক একটি প্রশ্ন হল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় কার লাভ এবং কার ক্ষতি? যদি এই নিয়ে হিসাবনিকাশও চলছে। এবার, কোন দিকে মোড় নেবে বাংলাদেশের রাজনীতি? তবে কি মেরুকরণ হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে?
বাংলাদেশের রাজনীতির অন্দরে লাভ ক্ষতির হিসাবনিকাশের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে লাভের তালিকায় প্রথমেই নাম উঠে আসছে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি, ও ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে নিয়ন্ত্রণ ছিল এনসিপি এবং জামায়াতসহ ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের হাতে। যদিওঅন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সেই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেনি । তবে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে, এরপর সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, এই সিদ্ধান্তে তারা সন্তুষ্ট ।
উল্লেখ্য রাজনৈতিক সমীকরণ, মেরুকরনের প্রভাব বা লাভ-ক্ষতির আলোচনা যাই হোক না কেন, এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কবে হবে, সেই প্রশ্নে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল গুলির অন্দরে। এমনকি এই দলগুলোর নেতাদের অনেকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার আশঙ্কাও করছেন ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রথমে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ কয়েকশো নেতা-কর্মী নিয়ে গত আটই মে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।সেই আন্দোলনের মুখে শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ জরুরি বৈঠক করে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের পর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগ যেহেতু নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে পারবে না, সে প্রেক্ষাপটে বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী একজন কমলো। সেটিই বিএনপির জন্য লাভের বিষয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এনসিপি, এবং জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামপন্থীদের লাভের অঙ্ক ভারী হয়েছে।
কারণ এসব দল ও সংগঠন গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করে আসছিল। এখন তাদের আন্দোলনের মুখে দাবি পূরণ হলো।
এছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসব দলের প্রভাব নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা ছিল।
এখন আওয়ামী লীগ কার্যত নিষিদ্ধ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার ও পরিস্থিতির ওপর এনসিপি এবং জামাতসহ ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনের প্রভাবের বিষয়টা আবার সামনে এসেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
তবে এসব দল ও সংগঠনের লাভের খতিয়ানেও তারতম্য আছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। তাদের মতে, এই আন্দোলন শুরু করেছিল এনসিপি। কিন্তু পরবর্তীতে জামায়তসহ ইসলামপন্থীদের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল।
অর্থাৎ,ক্ষমতায় বসা, বিরোধী দলের আসনে বসা বা ক্ষমতার সঙ্গে থাকার চিন্তা কাজ করছে যে দলগুলোর মধ্যে, এ দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় তাদের ভেতরে লাভ ক্ষতির বিভিন্ন সমীকরণ চলছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই রাজনীতিতে নানা সমীকরণ বা মেরুকরণের কথা শোনা যাচ্ছিল।এনসিপি, জামায়াত এবং ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোরই নানামুখী তৎপরতা বেশি দেখা গেছে।
এখন রাজনীতিতে এবং ভোটের মাঠেও আওয়ামী লীগের কোনো সুযোগ না থাকায় সক্রিয় দলগুলোর তৎপরতা বেড়েছে।
Discussion about this post