হাওড়া স্টেশন থেকে এসপ্ল্যানেড, এইটুকু রাস্তা যেতে এক সময় নাভিশ্বাস উঠে যেত যাত্রীদের। কিন্তু বর্তমানে হাওড়া গ্রীণলাইন মেট্রো হওয়ার পর থেকেই ভিড় কমেছে শহরের বাসগুলোর। ফলে অধিকাংশ বাসই যাচ্ছে খালি অবস্থায়। যাত্রী হিসাবে রয়েছে কেবলই চালক আর খালাসি। একদিকে যেমন গঙ্গার নীচে মেট্রো ভ্রমণের আনন্দ অন্যদিকে, ট্রাফিক জ্যামের ঝামেলা না থাকায় নির্ধারিত সময়ের থেকে অনেকটাই আগে অফিস কিংবা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন যাত্রীরা। তাই গঙ্গার নীচে থেকে এসি মেট্রোর পরিষেবা পেয়ে চাঁদিফাটা রোদের মধ্যে দিয়ে কেউ আর বাসে উঠতে চাইছে না। এই আবহেই হাওড়া থেকে শিয়ালদহ রুটের মেট্রো অবিলম্বে চালু করার দাবি তুলছেন যাত্রীরা। একইসঙ্গে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত বাসের বয়স যদি ১৫ বছরের বেশি হয়, তাহলে সেই বাসগুলি বাতিল করা হবে। ২০০৮ সালে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে এমনই একটি রায়ে দেওয়া হয়েছিল। যদি এই নিয়ম শুরু হয়, তাহলে তিলোত্তমার বুক থেকে হারিয়ে যাবে ৫০ শতাংশ বাস।
অন্যদিকে, আগে যেখানে এক ট্রিপে বাস চালিয়ে উঠত ৪৫০০ টাকা, সেখানে এখন তা নেমেছে মাত্র ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
এই প্রসঙ্গে সাধারন মানুষ বলছে, আগে বাসে উঠলে নিজেদের ইচ্ছে মতন বাস চালাত চালকরা। কিছু বললেই বলতো, এত তাড়া আছে যদি নেমে ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে যাও। এত কিছু দুর্ব্যবহার সহ্য করে তবুও মানুষ তখন বাসেই চাপতেন। কারণ বিকল্প হিসাবে কিছুই ছিল না। হাওড়ার যাত্রীদের ক্ষেত্রে হাওড়া থেকে লঞ্চে করে বাবুঘাটে এসেও তো বাসের জন্য একটা ঝক্কি পোহাতে হত। অন্যদিকে, হাওড়া ঠাসাঠাসি ভিড় বাসে চেপে বড়বাজারের জ্যাম পেরিয়ে এসপ্ল্যানেড আসতে লাগতো অনেকটা সময়। কিন্তু এখন আর তা হয় না।
বর্তমানে হাওড়া থেকে মোট্রোয় করে এসপ্ল্যানেড আসতে খরচ হয় মাত্র ১০ টাকা। বাসেও ভাড়া সেই একই। এত কম সময়ের মধ্যে নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য মেট্রোতে চড়াই শ্রেয়। চলতি বছর দুর্গা পুজোর আগেই হাওড়া থেকে শিয়ালদহ রুটের মেট্রো চালু করা নিয়ে দাবি তুলছেন যাত্রীদের একাংশ। সময় এখন অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। যদিও এখন বাস চালক ও খালাসিরা রোয়াব দেখলেই পাল্টা কথা শোনাতেও ছাড়ছেন না যাত্রীরা। বিরক্ত হয়ে যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, এমনিতেই এখন লোক পাচ্ছ না, এরপর মেট্রো চালু হলে তো বিয়ে বাড়ির জন্যই কেবল ভাড়া খাটতে হবে। তবে একথা সত্যি, হাওড়া গ্রীণ লাইন মেট্রো পরিষেবা চালু হতেই সড়ক পথে ভিড় কমেছে যাত্রীদের।
ফলে কপালে চিন্তায় ভাঁজ পড়েছে বাস মালিক ও বাস সিন্ডিকেট কর্মকর্তাদের। এই ভাবে চলতে থাকলে একদিন ফাঁকা মাঠে পরিণত হবে হাওড়া বাস টার্মিনাল। ঠিক যেমন যুগের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে শহরের বুক থেকে প্রায় হারিয়েই গেছে ট্রাম। ঠিক তেমনই হাওড়া শিয়ালদহ যোগ হয়ে গেলে মেট্রোর মাধ্যমে খুব সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রীরা পৌঁছে যাবে নিজ গন্তব্যে। যদিও বাস চালকদের বক্তব্য একটু অন্য রকম। তাঁদের কথায়, মেট্রো চালু হয় সকাল ৭টা থেকে বন্ধ হয় রাত সাড়ে দশটার মধ্যে। তাই ভোরবেলা ট্রেন ধরতে ও রাতে বাড়ি ফিরতে বাসই একমাত্র ভরসা যাত্রীদের কাছে।।
Discussion about this post