বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক ভারতে। এই দেশে রেল ব্যবস্থা এতটাই ছড়িয়েছে যে ভারতীয় রেল আক্ষরিক অর্থেই দেশের লাইফলাইন। প্রতিদিন ১ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি যাত্রী এবং ২০ লক্ষ টনেরও বেশি পণ্য পরিবহন করে ভারতীয় রেল। মোট ৭,৩২১টি স্টেশন বিশিষ্ট ভারতের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৬৭,৪১৫ কিলোমিটারেরও বেশি। আর ভারতের রেল ব্যবস্থা পরিচালনা করার জন্য ১২ লক্ষ ৪৭ হাজার কর্মচারী দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছেন। আজ আপনাদের এক অন্য গল্প শোনাবো। আগেই বলেছি, ভারতীয় রেলে সাত হাজারের বেশি রেলস্টেশন রয়েছে। সেগুলির মঘ্যে বেশ কয়েকটি স্টেশন নিয়ে বহু গল্পগাথা চালু রয়েছে। কয়েকটি স্টেশনের ইতিহাস বেশ চিত্তাকর্ষক। যেমন আজ আপনাদের শোনাবো ভারতের প্রথম এবং শেষ স্টেশন সম্পর্কে। শুনলে অবাক হবেন, এটি একটিই স্টেশন, যা একদিকে ভারতের প্রথম, অন্যদিকে ভারতের শেষ রেলস্টেশন। আরও জানলে গর্বিত হবেন, এই স্টেশনটি কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই অবস্থিত।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মালদা জেলার হবিবপুর অঞ্চলের সিঙ্গাবাদ রেলস্টেশন। এটি বাংলাদেশ থেকে ভারতের দিকে আসতে গেলে প্রথম, এবং ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশের দিকে যেতে গেলে শেষ রেলস্টেশন। তবে বহু বছর এই স্টেশনে থামেনি কোনও যাত্রীবাহী ট্রেন। সারাদিনে কয়েকটি মালবাহী ট্রেন দুই বাংলায় যাতায়াত করে সিঙ্গাবাদ স্টেশন হয়ে। ভারতীয় রেল সূত্রে আরও জানা যায়, সিঙ্গাবাদই এখন ভারতের প্রাচীনতম রেলস্টেশন। স্বাধীনতার বহু আগে এই রেলস্টেশন তৈরি করেছিলেন তফকালীন ব্রিটিশ শাসকরা। দেশভাগের আগে এবং পরে সিঙ্গাবাদ ছিল খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটি রেলস্টেশন।
একসময় দার্জিলিং মেলের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ দূরপাল্লার ট্রেন সিঙ্গাবাদ হয়েই যাতায়াত করতো। যদিও দেশভাগের পর সিঙ্গাবাদ স্টেশন দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ১৯৭৮ সালে সিঙ্গাবাদ দিয়ে ফের দুই দেশের মধ্যে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ভারতের শেষ প্রান্তে সিঙ্গাবাদ এবং বাংলাদেশের শেষ প্রান্তে রোহনপুর স্টেশন। ২০১১ সাল থেকে সিঙ্গাবাদ দিয়ে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে। তবে বর্তমানে এই স্টেশন দিয়ে কোনও যাত্রীবাহী ট্রেন চলে না। মাসে ২৫ থেকে ৩০টি মালবাহী ট্রেন চলে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হল, সিঙ্গাবাদ স্টেশনে আজও সবকিছু রয়ে গিয়েছে সেই ব্রিটিশ আমলের। স্টেশন বিল্ডিংটিও তৈরি ব্রিটিশ আমলে। ফলে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো সিঙ্গাবাদ রেলস্টেশন ভারত বা বাংলাদেশের প্রাচীনতম বলেও উল্লেখ করা যায়। সিঙ্গাবাদ স্টেশনে গেলে আজও দেখবেন হ্যান্ড গিয়ারের পুরোনো সিগনাল ব্যবস্থা, কার্ডবোর্ডের টিকিট, পুরোনো আমলের টিকিট কাউন্টার, স্টেশন মাস্টারের অফিসে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি এবং টেলিফোনটিও সেই ব্রিটিশ আমলের। যদিও সিঙ্গাবাদ স্টেশনে কয়েকজন রেল কর্মচারী কাজ করেন, তবে বর্তমানে এই স্টেশন দিয়ে কোনও যাত্রীবাহী ট্রেন চলে না।
ফলে বর্তমানে এই স্টেশনে টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে সিঙ্গাবাদ রেলস্টেশন। একসময় এই স্টেশন দিয়েই যাতায়াত করেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধির মতো মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। আজ সেখানে শুধুই দেখা যায় ভারতীয় রেলের তরফে চিরাচরিত হলুদ সাইনবোর্টে কালো কালিতে লেখা সিঙ্গাবাদ এবং তার নীচে লেখা ভারতের শেষ স্টেশন।
Discussion about this post