দশ মহাবিদ্যার অন্যতম রূপ কালি। কখনও কালো তো কখনও শ্যামা বর্ণের হন দেবী। দেবীর একহাতে খাঁড়া, এক হাতে অসুরের কাটা মুণ্ড। ঘন কালো কেশ, লম্বিত জিহ্বা। শত্রুদের নাশ করার জন্যই আবির্ভুত হয়েছেন মর্তে তিনি। নাম নিলে সবার আগে চোখের সামনে ভেসে ওঠে দেবীর এই উগ্র রূপকেই। কোথাও শ্যামা কালী তো কোথাও আবার শ্মশানকালী রূপে পুজিত হন দেবী। অনেকেই হয়তো জানেনে না, মায়ের এই দুই বর্ণ বাদ দিয়েও রয়েছে দেবীর আরও একটি অঙ্গরূপ। তাঁর এই রূপের জন্য এখানে ভক্তদের কাছে দেবী শ্বেতকালী বা ফলহারিণী কালি নামে পরিচিত। কিন্তু কোথায় রয়েছে দেবীর এমন বিগ্রহ? পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির লালাবাজার এলাকায় রয়েছে দেবী শ্বেত কালীর মন্দির। শুধু তাঁর গায়ের রং-ই যে শ্বেত, তা কিন্তু নয়। উগ্র বা নগ্ন রূপে নয়, দেবী এখানে শান্ত ও বস্ত্র পরিহিতা। বছরের কোনও নির্দিষ্ট দিনে তো বটেই, এছাড়াও প্রতিদিনই দেবীর নিত্যপুজো হয় এখানে। প্রত্যেক অমাবস্যায় বিশেষ ভাবে পুজিত হন দেবী। সবচেয়ে আশ্চর্যের ফলহারিনী অমাবস্যায় দেবী এখানে পুজিত হয় কালী রূপে।
লোক মুখে শোনা যায়, কুলটির লালবাজারের শ্বেতকালীর পুজে শুরু হয়েছিল প্রায় বছর ১৫ আগে। এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রয়েছেন, তাঁকেই স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন দেবী। দেবীর নির্দেশ মতো, বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের পাথর কেটেই তৈরি হয় মায়ের এই মুর্তি। তারপর থেকেই শুরু হয় শ্বেত বর্ণের ফলহারিনী মায়ের পুজো। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, এখানে দেবীর কাছে কিছু চাইলে, মা তাঁকে ফেরান না। পূরণ করে ভক্তের মনোবাঞ্ছা। তবে জ্যোষ্ঠ মাসের ফলহারিণী অমাবস্যার দিনে শ্বেত কালীর বিশেষ পুজো হয় এখানে। পুজো উপলক্ষ্যে মেলাও বলে মন্দির প্রাঙ্গণে। এছাড়াও, প্রত্যেক শনি ও মঙ্গলবার মন্দিরে প্রাঙ্গণে ভক্তদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। দেবীর এই মনমুগ্ধকর রূপ দেখতে হলে, আপনাকে আসতেই হবে কুলটির লালবাজারের এই শ্বেত কালী মন্দিরে।।
Discussion about this post