পরিশ্রম ই সাফল্যের চাবিকাঠি।প্রথম জীবনে যারা সংগ্রাম করেন,তাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়।আমাদের দেশের সকল সফল ব্যক্তিদেরই প্রথম জীবনে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে।ভারতের সফল ব্যবসায়ী এর প্রসঙ্গ উঠলেই প্রথম সারিতে যাদের নাম উঠে আসবে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রতন টাটা, ধীরুভাই অম্বানী, মুকেশ অম্বানী , গৌতম আদানি, কিরণ মজুমদার, আরদেশির গোদরেজ।এনারা আজ প্রত্যেকেই শুধু প্রতিষ্ঠিতই নয় আমাদের কাছে সাফল্যের উদাহরণ ও বটে।শুধু ভারতই নয় গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে তাদের সুনাম। তবে অনেকেই জানেন না যে বর্তমানে ভারতের প্রথম সারির শিল্পপতিদের জীবনের প্রথমার্ধ টা ঠিক কেমন ছিল?উপার্জনের জন্য তারা প্রথম জীবনে কি করেছিলেন।জানলে অবাক হবেন কোটি কোটি টাকার মালিক একসময় কত কম বেতনে কাজ করেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের প্রথম সারির শিল্পপতিদের কেরিয়ারের শুরু কী ভাবে হয়!
রতন টাটা :
ভারতের শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম রতন টাটা।১৯৬১ সালে টাটা স্টিল সংস্থায় সাধারণ কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন তরুণ রতন টাটা।পরে টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমোটিভ কোম্পানিতে ছ’মাস প্রশিক্ষণ নেন তিনি।পরে নিজের সংস্থা নিয়েই সফল ভাবে এগিয়ে যান তিনি।আজ তার সংস্থা টাটা সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে।
ধীরুভাই অম্বানী:
রিলায়েন্স গ্রুপ ধীরুভাই অম্বানী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। ১৯৫০ দশকে ব্যবসা শুরু করেছিলেন ধীরুভাই।কোম্পানিটি ১৯৬০-এর দশকে টেক্সটাইলে প্রসারিত হয় এবং ১৯৮০-এর দশকে পেট্রোকেমিক্যাল সেক্টরে প্রবেশ করে। রিলায়েন্স বর্তমানে ২০ লক্ষ কোটি টাকার মালিক।তবে ছোটবেলায় অর্থাভাবের সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি।গুজরাতের একটি গ্রামে জন্ম হয় তার। আর্থিক অভাবের কারণে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাঁকে।আর্থিক সহযোগিতার জন্য পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ছোটবেলায়। বুনন সংক্রান্ত কাজ করার জন্য ১৯৮৮ সালে ইয়েমেনের এডেনে চলে যান ধীরুভাই।সেখানকার একটি গ্যাস স্টেশনে পেট্রল বিক্রি করতেন তিনি।এই চাকরি থেকে ধীরুভাইয়ের প্রথম উপার্জন ছিল ৩০০ টাকা। এরপর এডেন থেকে মুম্বই ফিরে নিজের ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করেন তিনি।আজ সফল ব্যবসায়ী ধিরুভাই আম্বানি।
গৌতম আদানি:
ভারতের সফল ব্যবসায়ী গৌতম আদানির সংস্থা আদানি গোষ্ঠী ৬ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকার মালিক।তবে জীবনের প্রথমার্ধ্যে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল তাকে।১৯৭৮ সালে মুম্বই যান গৌতম। মুম্বইয়ের একটি সংস্থার জন্য হিরে বাছাইয়ের কাজ করতেন তিনি।দুই থেকে তিন বছর সেখানে কাজ করার পর নিজেই মুম্বইয়ে হিরের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে একটি প্রতিষ্ঠিত হয় আদানি গ্রূপ।আজ গৌতম আদানি কোটি কোটি টাকার মালিক।
আরদেশির গোদরেজ :
গোদরেজ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আরদেশির গোদরেজ।কেরিয়ারের প্রথমে ওষুধের দোকানের কর্মী হিসাবে রোজগার শুরু করেছিলেন তিনি।প্রথমে আরদেশির ভেবেছিলেন, অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করবেন।এই ভাবনা নিয়েই প্রথম ব্যবসা শুরু গৌতম আদানির।শুরুতেই ব্যর্থ হন তিনি।সেই সময় টাকাপয়সাও বেশি ছিল না,যা দিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন তিনি। সেই সময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মেরওয়ানজি কামা নামে এক ব্যবসায়ী।আরদেশির ব্যবসার জন্য তাঁকে টাকা দিয়েছিলেন মেরওয়ানজি।এরপর তালা নির্মাণের ব্যবসা শুরু করেছিলেন আরদেশির।আজ সফলতার উদাহরণ তিনি।বর্তমানে এই কোম্পানির নেট ওয়ার্থ ১৩.৯ বিলিয়ন।
সুধা মূর্তি :
ইনফোসিস সংস্থার অধিকর্তা নারায়ণ মূর্তির স্ত্রী সুধা মূর্তি। তিনি ইংরেজি সাহিত্যজগতের এক জনপ্রিয় লেখিকা সুধা মূর্তি।ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।জানা যায়,টেলকো সংস্থায় মহিলা কর্মীদের প্রতি আচরণ পছন্দ ছিল না সুধার। যার ফলে তৎকালীন অধিকর্তাকে একটি পোস্টকার্ড পাঠিয়েছিলেন তিনি।অধিকর্তা দেখা করেছিলেন সুধার সঙ্গে।সেই সংস্থায় চাকরি পান সুধা।যা ছিল তার জীবনের প্রথম চাকরি।
ইন্দ্র নুয়ি:
পেপসিকো সংস্থার অন্যতম কর্তা ইন্দ্র নুয়ি।বর্তমানে বিপুল অর্থের মালিক তিনি।জীবনের শুরুতে খুব পরিশ্রম করতে হয় তাকে।১৮ বছর বয়সে একটি কারখানায় প্রথম কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।আর তার পর মুম্বইয়ের অন্য একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন তিনি।বর্তমানে ৩৫০ মিলিয়ন অর্থের মালিক ইন্দ্র নুয়ি।পরিশ্রমের ও একগ্রতায় সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গেছে।
কিরণ মজুমদার শ :
ভারতের শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম কিরণ মজুমদার শ। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার মালিক তিনি।
কিন্তু একসময় হাতখরচের জন্য কফিশপে কাজ করেছেন তিনি। বায়োকন লিমিটেড এবং বায়োকন বায়োলজিক্স লিমিটেডের নির্বাহী চেয়ারপার্সন এবং প্রতিষ্ঠাতা তিনি। পড়াশোনার সূত্রে অস্ট্রেলিয়ায় যান কিরণ।সেখানে যাওয়ার পর হাতখরচের জন্য কফিশপে কাজ করতে শুরু করেন তিনি।জীবনের প্রথমার্ধ্যে সংগ্রাম করলেও আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত।
Discussion about this post