কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রটি বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। কারণ এর ভৌগলিক অবস্থান। বর্ষা নামলেই ঘাটালে বন্যা অনিবার্য। ফলে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ঘাটালকে ঘিরে রাজনৈতিক তরজা চায়ের পেয়ালায় তুফান তুলছে। কিন্তু ঘাটালবাসীর আজ পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। কারণ বহু প্রতিক্ষিত ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে বাংলার শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে চাপানউতোর আজও অব্যাহত। এবার ঘাটালের এক অখ্যাত গ্রামের বাসিন্দা প্রবীন গোপাল মণ্ডল এমন একটি কাজ করে দেখালেন যে তা দেখে লজ্জায় মুখ ঢাকতে বাধ্য হবেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব। লজ্জিত হবেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দাসপুর ১ ব্লকের নিজামপুর গ্রাম। এই গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে কংসাবতী বা কাঁসাই নদী। আর এই নদী পার হয়ে পাশের গ্রাম পার্বতীপুর বা ঘাটালের অন্যত্র যাওয়ার একমাত্র পথ একটি জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো। আর সেটিও প্রতি বছর বন্যায় ভেসে যায়। সেটি মেরামতি না হওয়া পর্যন্ত কয়েকমাস নিজামপুর বা পার্বতীপুরের বাসিন্দাদের অনেকটা ঘুরপথে যাতায়াত করতে হতো। ফলে স্কুল পড়ুয়া থেকে রোগী, সমস্যায় পড়তেন সকলেই। এবার সেই বাঁশের সাঁকোর বদলে কাঠের শক্তোপক্তো সেতু বানিয়ে সকলকে তাঁক লাগিয়ে দিলেন নিজামপুরের বাসিন্দা গোপাল মণ্ডল। পুরো সেতুর খরচ ২৪ লক্ষ টাকা তিনি নিজের পকেট থেকে বহন করেছেন। কোনও সরকারি সাহায্য তিনি গ্রহন করেননি বলেই দাবি। ফলে নিজামপুর-সহ আশেপাশের গ্রামগুলিতে এখন খুশির হাওয়া।
লোকসভা ভোটের মুখে নজিরবিহীন এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে জেলা প্রশাসন। চাপে পড়েছে শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা। এমনকি লজ্জার মুখে পড়েছেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব ওরফে দীপক অধিকারীও। গ্রামবাসীদের দাবি, প্রতিটি ভোট এলেই প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। অথচ এখানকার বাসিন্দাদের ভুগতে হয় প্রাকৃতিক বন্যার জন্য। কারণ কোনওবারই কোনও প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় না। ঘাটালো এবারও প্রার্থী হয়েছেন দেব। গত দুবারেও তিনি নিজামপুর ও পার্বতীপুরের মাঝে স্থায়ী সেতু তৈরি করতে পারেননি। অথচ ওই নদীতেই ডিঙি নৌকায় স্থানীয় মানুষদের পারাপার করানো গোপাল মণ্ডল নিজের পকেট থেকে ২৪ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করে ফেললেন আস্ত একটি কাঠের সেতু।
গোপাল মণ্ডলের বক্তব্য, গ্রামের মানুষদের দুর্দশা দেখেই নিজের জমানো টাকা খরচ করে এই ব্রিজ বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। গোপাল মণ্ডলের তৈরি করা কাঠের সেতুটি অবশ্য সাদামাটা নয়। রীতিমতো দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজের আদলে লোহার তারের টান দেওয়া নকশাও রয়েছে। ফলে কাঁসাই নদীর ওপর তৈরি এই ছোট্ট ব্রিজ এখন গ্রামবাসীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁদের বক্তব্য, কয়েক দশকে জেলা প্রশাসন যা করতে পারেনি, ঘাটালের সাংসদ যা করতে পারেননি, সেই কাজ নিজের পয়সায় করলেন গোপালবাবু। তাঁদের ভরসা লোহার তারের টানা দেওয়ায় এবার বর্ষাতেও এই সেতুর কোনও ক্ষতি হবে না।
Discussion about this post