বঙ্গোপসাগরে ব্রহ্মোসের গর্জন।
সোমবার ভারতীয় সেনা সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মসের পরীক্ষা চালিয়েছে। ভারতীয় সেনার ব্রহ্মস ইউনিটে দক্ষিণ কম্যান্ড এবং তিন বাহিনীর আন্দামান-নিকোবর কম্যান্ড যৌথভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করে। ক্ষেপণাস্ত্রটি তাঁর লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানে। সেনার তরফ থেকে বলা হয়েছে, সমস্ত পরীক্ষার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। ব্রহ্মোস ইউনিটগুলি প্রকৃত অপারেসনাল মিশনের জন্য প্রস্তুত। ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তি রাশিয়ার। আর ভারত অর্থ বিনিয়োগ করেছে। শব্দের চেয়ে তিন গুন দ্রুত গতিতে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুটতে পারে। এটা এখন ভারতের সিগ্নেচার স্ট্র্যাটেজিক টুল। নতুন পাঁচ দফা পরিকল্পনায় ব্রহ্মসোর পাল্লা এবং গতি দুটিই বাড়ানো হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্রটিকে সুপারসনিক থেকে হাইপারসনিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শব্দের চেয়ে পাঁচগুন বা তার বেশি গতিবেগসম্পন্ন। ক্ষমতা বা রেঞ্জ ২৯০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাউথব্লক। এর অর্থ, এই ব্রহ্মসের নাকের ডগায় চলে আসবে ইসলামাবাদ, করাচি, মায়ানমার। সার্বিকভাবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। সোমবারের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভারত প্রবেশ করল নিউ থিয়েটার মিশাইল যুগে। যুদ্ধক্ষেত্রে যে ধরনের পরিস্থিতি থাকে, তারই অনুরূপ পরিস্থিতিতে ব্রহ্মোস পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, সব ধরনের পরিস্থিতিতেই এটি সাফল্যের সঙ্গে উতরে গিয়েছে।
অপারেশ সিঁদুর অভিযানের পর থেকেই এই ক্ষেপণাস্ত্র ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফেরে বক্তৃতাতেও উঠে এসেছিল ব্রহ্মস। আমাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও ইসলামবাদকে হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, সিঁদুর অভিযান শুধুই ঝলক। পাকিস্তানের প্রতিটি কোনা এই ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে রয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরে ইসলামাবাদের মিত্র বেজিংয়ের দাপট রুখতে ফিলিপিন্স ভারতের থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি কিনেছেন। প্রশ্ন হল ভারত কেন এই সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল।
এখানে দেওয়া হল ব্রহ্মোস পরীক্ষা দেখার লিঙ্ক। ভারতীয় সেনার সাদার্ন কম্যান্ডের এক্স হ্যান্ডেল থেকে পাওয়া
খালি চোখে এই পরীক্ষাকে দেখলে মনে হতে পারে, সেনাবাহিনী বোধহয় ক্ষেপণাস্ত্রটির প্রযুক্তিগত দিকগুলি খতিয়ে দেখতে চাইছে। সেটা আদৌ নয়। ভারত একটা ভূ-রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে। সেই বার্তা বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং চিনকে। আর সেই বার্তা দিতে বঙ্গোপসাগরকে বেছে নেওয়া হয়। প্রশ্ন ভারত কেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ক্ষেপণসাস্ত্রটির পরীক্ষা করল?
ভারত সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিঁদুর অভিযানে পাকিস্তানের যে সমস্ত জঙ্গিঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই সব জঙ্গিঘাঁটি নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সাউথব্লক মনে করছে পূর্ব দিকে পাকিস্তান সেনা নতুন একটি ফ্রন্ট খোলার চেষ্টা চালাবে। উদ্দেশ্যে ভারতের ওপর হামলা চালানো। এই পরীক্ষার দ্বিতীয় কারণ চিন। ডোকালাম নিয়ে উত্তেজনা, দক্ষিণ চিন সাগরে ড্রাগনের আগ্রাসন। বেজিং এখন দিল্লির ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে। বিশেষ করে চিকেন নেক করিডোরের দিকে। এইখানে কোনওভাবে প্রতিবেশী দেশ হামলা চালালে এবং সক্ষম হলে গোটা উত্তর-পূর্বের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। দিল্লিতে খলিলুরের সঙ্গে বৈঠকে ডোভাল একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে, তাদের দেশের পাকিস্তানের ১২টি জঙ্গি শিবির ছড়িয়ে রয়েছে। ঢাকা সেগুলি ধ্বংস করতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি। বাংলাদেশ এখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে লজিস্টিক রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। প্রশ্ন উঠছে দিল্লি কি ঢাকাকে সন্দেহের চোখে দেখছে? সরাসরি ভাবে নয়। তবে ভারত চারটি বার্তা দিচ্ছে?
প্রথম বার্তা, বাংলাদেশী তরুণরা কীভাবে তালিবানের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে? এটা ভারতের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি। দ্বিতীয়বার্তা, বাংলাদেশ যদি কঠোর পদক্ষেপ না করে তাহলে ভারত একতরফা ব্যবস্থা নেবে। রাজনাথের ভাষায় ঘুসকে মারেঙ্গে। তৃতীয় বার্তা বঙ্গোপসাগর, আন্দামান-নিকোবর অঞ্চলকে ভারত সম্ভাব্য যুদ্ধস্থল হিসেবে বিবেচনা করছে। আর সর্বশেষ বার্তাটি হল নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্যোগকে প্রাধান্য দিতে হবে।












Discussion about this post