১৯৪৭ সালে ব্রিটেন থেকে ভারত স্বাধীন হলেও গোয়া দীর্ঘ সময় ধরে পর্তুগালের দখলেই ছিল। ১৯৬১ সালে এটি ভারতের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়। বাল্মিকী ফেলেরো গোয়ার ইতিহাস নিয়ে একটি বই লেখেন। পর্তুগিজরা প্রায় ৪৫০ বছর ধরে গোয়াকে তার দক্ষিণ – পশ্চিম উপকূলে শাসন করেছিল। এমনকি পর্তুগিজরা প্রথম আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছিল। গোয়া ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজদের অধীনে ছিল। পর্তুগাল ন্যাটোর সদস্য হওয়ায় ভারত সরকার যুদ্ধ করতে চায়নি ন্যাটো দেশের সাথে। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে যখন পর্তুগিজ সৈন্যরা ভারতীয় জেলেদের উপর গুলি চালায়, তখন স্বাধীন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কৃষ্ণ মেনন ও প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে রাজ্যটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। অপারেশন বিজয়, সামরিক বাহিনী পাঠানোর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রাজ্যটি পর্তুগিজ অধীন থেকে মুক্ত হয়।
গোয়ার মুক্তির অনেক ইতিহাস আছে। গোয়া লিবারেশন মুভমেন্ট নামে একটি দল গোয়াতে পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। গোয়ায় মুক্তি সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন যে সব মুক্তি সংগ্রামী তারা হলেন-
নারায়ণ হরি নায়েক
দত্তাত্রয় দেশপান্ডে
মোহন রানাডে
প্রভাকর সিনারী
বিশ্বনাথ লওয়ান্ডে
রাম মনোহর লোহিয়া, প্রমুখ।
প্রতি বছর ১৯ ডিসেম্বর দিনটিকে গোয়া মুক্তি দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ‘ ‘অপারেশন বিজয় ‘ – র ৪৮ ঘন্টার সামরিক অভিযান গোয়াকে পর্তুগিজ আধিপত্য থেকে মুক্ত করেছিল। এই ছোট্ট রাজ্যটি কিন্তু এখন ভারতের অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র। গোয়ার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, সমুদ্র – সৈকত, এবং রকমারি খাবার দাবারের টানে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন।
এখানে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও পুরনো দিনের মন্দির, পর্তুগিজ শাসনকালের সৌধ, পাহাড় ইত্যাদি আছে। তাছাড়াও অগণিত ছোট বড়ো সৈকতের সৌন্দর্য মাধুরি আপনাকে মনোমুগ্ধকর করবে। শহরে একাধিক হম -স্টে সহ সমুদ্রসৈকতে রাত কাটানোরও ঢালাও আয়োজন রয়েছে এই রাজ্যে। এছাড়া দক্ষিণে কর্নাটকের দিকে শেষ সুপরিচিত সৈকত পালোলেম ও উত্তরে মহারাষ্ট্রের দিকে গোয়ার জনপ্রিয় বিচ আরামবোল অবস্থিত। মানদোভি নদী ও আরব সাগরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এই দুর্গ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি জায়গা।
দিভার দ্বীপ
এখানে দেশ – বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এই দ্বীপের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসেন। অসম্ভব সৌন্দর্যমন্ডিত এই দ্বীপটিতে পর্তুগিজ স্থাপত্যের নিদর্শন ও পুরাতন গীর্জা রয়েছে।
চাপোড়া দুর্গ
এটি গোয়ার একটি বিখ্যাত দুর্গ। ২০০১ সালে এখানে দিল চাহতা হ্যায় চলচ্চিত্রটির শুটিং হয়েছিলো। চাপোড়া নদীর তীরে এই দুর্গটি অবস্থিত।
ক্যাসিনো
ক্যাসিনো একটি সমুদ্র সৈকত। এটি মানদোভি নদীর তীরে অবস্থিত। সমুদ্র সৈকতটি পর্যটকদের কাছে প্রিয় স্থান।
বুঙ্গি জাম্পিং
বুঙ্গি জাম্পিং তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান। প্যারাসাইক্লিং সহ আরো বিভিন্ন বিনোদন মূলক বিভিন্ন কিছু রয়েছে এখানে। বলা হয় এটি গোয়ার বহুল জনপ্রিয় স্থান।
আগুয়াদা দুর্গ
সপ্তদশ শতকে পর্তুগিজদের দ্বারা এই দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল। মানদিভি নদী ও আরব সাগরের মাঝে অবস্থিত এই অঞ্চলে অস্কে পর্যটকরা দারুন আনন্দ অনুভব করেন।
টিটোস নাইট ক্লাব
অবসর সময়ে নাইট ক্লাবে এসে সময় কাটাতে পারেন। সারাদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পর রাতে এই নাইট ক্লাব যুবক যুবতীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।
থালাসা
গোয়ার রেস্তোরাঁ গুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। গোয়াতে যেমন হরেক রকমের খাবারের সম্ভার দেখা যায়, তেমনি এর রেস্তোরাঁ গুলোও বিশেষ মনোরম। এই রেস্তোরাঁতে দম্পত্তিদের সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত স্থান।
Discussion about this post