গরমে সকলেই ঘুরতে যান। কিন্তু অনেকে আছেন যারা বর্ষাতেও ঘুরতে ভালোবাসেন। গ্রীষ্মের শেষ হয়ে বর্ষা প্রায় দোরগোড়ায়। এখন মাঝে মধ্যেই শহরে কয়েক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাতে প্রকৃতি সেজে ওঠে অপরূপ সৌন্দর্যে। বর্ষা নিয়ে অনেক কবিতা আছে। সাধে কি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষাকে নিয়ে লিখেছিলেন,
“মেঘের ‘পরে মেঘ জমেছে ‘
আঁধার করে আসে
আমায় কেনো বসিয়া রাখ
একা দ্বারের পাশে।”
বিশেষ করে বর্ষাকালে গ্রামবাংলায় প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। তাই বর্ষাতে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে বাংলার বিশেষ জনপ্রিয় কয়েকটি অঞ্চলে।
বকখালি
কলকাতা থেকে মাত্র ১২৫ কিলোমিটার। বিশেষ করে সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য বেশিরভাগ পর্যটকরা এখানে ভিড় করেন। বক খালির সব থেকে বড় আকর্ষণ বকখালি কুমির প্রকল্প, জম্মুদ্বীপ, সুন্দরবন সাগরদ্বীপ, ফ্রেজাগঞ্জ দ্বীপ ও ওয়াচ টাওয়ার। এখানে ঘোরার সব থেকে উপযুক্ত ঋতু বর্ষাকাল। যে সমস্ত পর্যটক খুব ঘিঞ্জি জনবহুল এলাকা পছন্দ করেন না, অথচ সাগরের ঢেউয়ের ডাকে সাড়া দিতে নির্জনতার মাঝে অগভীর জলরাশিতে গা ভাসাতে চান তাদের কাছে বকখালি স্বর্গরাজ্য হতে পারে।
মুকুটমণিপুর
ছোট সবুজ পাহাড়ি বৃষ্টির ছোঁয়া, জলের বাঁধ, সবুজ বনের অপরূপ দৃশ্য দেখতে প্রতি বছর বিশেষ করে বর্ষাতে পর্যটকরা এখানে ভিড় জমান। বিশেষ করে কংসাবতী এবং কুমারী নদীর সঙ্গমস্থলে কৃত্রিম জলাধার যা ভ্রমণের আনন্দকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। বাঁকুড়া জেলার এই স্থানে রয়েছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধ, যা মুকুটের মত রহস্যময় টিলা । মুকুটমণিপুরের একটা অংশ এখনও উপজাতীয় সংস্কৃতির গন্ধে বাস করে। পর্যটকদের কাছে সর্বদাই এটি আকর্ষণীয় জায়গা। বিশেষ করে আপনি যদি ফটোগ্রাফি পছন্দ করেন তাহলে মুকুটমণিপুর আপনার কাছে স্বপ্নের জায়গা।
ডায়মন্ড হারবার
কলকাতা থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই জায়গা বর্ষায় ভ্রমণের জন্য সেরা স্থান। বিশেষ করে নদী এলাকা হওয়ায় এখানে বর্ষার নতুন জলে নানা ধরনের মাছ দেখতে পাওয়া যায়। ডায়মন্ড হারবার আগে হাজিপুর নামে পরিচিত ছিল। ডায়মন্ড হারবারের জলবায়ু সামগ্রিকভাবে উষ্ণ ও আর্দ্র প্রকৃতির। তবে বর্ষাতে বিশেষভাবে সুন্দর হয়ে ওঠে এর প্রকৃতি পরিবেশ। হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরে ২০০০ বছরের পুরনো লাইটহাউস বা বাতিঘর আছে। তাছাড়া আছে ডায়মন্ড হারবার গির্জা এবং রামপ্রসাদ চক্রবর্তী মেমোরিয়াল সাউথ বেঙ্গল মিউজিয়াম।
সুন্দরবন
বর্ষাকালে সুন্দরবন যেনো প্রকৃতির রানী। বর্ষায় সুন্দরবন হয়ে ওঠে আরো সুন্দর। যদি আপনি বর্ষাকালে সুন্দরবনে ঘুরতে চান তাহলে দেখতে পাবেন সবুজ গাছপালা, ঘন সবুজ বন, নানা রঙের প্রজাপতি, বন্য প্রাণীর সমাহার। বেশ রোমাঞ্চকর পরিবেশ দেখতে পেতে পারেন। সাথে সুন্দরবনের হোটেল গুলিতে সুস্বাদু মাছের বিভিন্ন রকম ভ্যারাইটিস খাবার খাওয়ার সুবিধাও পাবেন। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখতে পাবেন এখানে। তাছাড়া দর্শন মিলতে পারে বেঙ্গল টাইগার, বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি ও কুমিরের। এছাড়াও চিত্রা হরিণ ও বিভিন্ন প্রকারের সাপের দেখা পেতে পারেন। সুন্দরবনে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসেন। আছে বিভিন্ন প্রকারের গাছের বাহার। যার মধ্যে সর্বাধিক সুন্দরী ও গেওয়া।
Discussion about this post