প্রকৃত যোগ্য এবং অযোগ্য কারা? এই প্রশ্নেই এখন কুপোকাত রাজ্য সরকার। সোমবার সন্ধ্যের মধ্যে সেই তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে সারারাত এসএসসি ভবনের সামনে চলে বিক্ষোভ। তৈরি হয় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। মঙ্গলবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, “যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করবই”। এটা কি চাকরিহারাদের প্রতি রাজ্য সরকারের নতুন প্রতারণা?
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য শিক্ষা দফতর চাকরিহারা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের পাশে রয়েছে বলে মঙ্গলবার আবারও দাবি করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সোমবার সন্ধ্যা থেকে সল্টলেকের এসএসসি ভবনের সামনে ধর্ণায় বসেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সেই থেকে চলছে ধর্ণা, তবে সোমবার রাতে বেশ কয়েকবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করাকে কেন্দ্র করে। কারণ ঘড়ির কাঁটা যত এগিয়েছে, ততই পিছিয়েছে যোগ্য-অযোগ্যর তালিকা প্রকাশ। ফলে এসএসসি ভবনের বাইরে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ‘যোগ্য’ চাকরিহারারা। তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত ঘেরাও চলবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে এসএসসি দফতরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন চাকরিহারাদের প্রতিনিধিরা। সেখানেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, ২১ এপ্রিল যোগ্য-অযোগ্যর পৃথক তালিকা প্রকাশ করা হবে। এসএসসি সূত্রের খবর ছিল, সোমবার সন্ধে ছ’টার মধ্যে সেই তালিকা আপলোড করা হবে ওয়েবসাইটে। কিন্তু সেই আশ্বাসের বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এসএসসি ভবনের সামনেই ঘেরাও করেন চাকরিহারারা। “আপনারা ভিতরে কাজ করুন। কিন্তু তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন-ঘেরাও চলবে”। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও তালিকা প্রকাশিত না হওয়ায় দফায় দফায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন শিক্ষকেরা। পুলিশের সঙ্গে বেধে যায় বচসা, শুরু হয় হাতাহাতি। পুলিশ তাদের সংযত আচরণ করতে বললেও কানেই তোলেনি বিক্ষোভকারীরা। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, “আমাদের কাছে ভাগ রয়েছে। সেই অনুসারে আমরা কাজ করছি। এমন কোনও কাজ করবেন না বা এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যাতে রিভিউ পিটিশন আপনাদের বিপক্ষে চলে যায়”।
কিন্তু তালিকা প্রকাশ না হলে কারা বেতন পাবেন, কারা স্কুলে যাবেন তা নির্ধারণ হবে কী ভাবে? রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য দাবি করেন তালিকা তাঁদের হাতেই আছে। যা মধ্যশিক্ষা পর্যদ আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে।
কিন্তু আসল ঘটনা কি তাই? আইনজ্ঞরা বলছেন, কলকাতা হাইকোর্ট যে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগকে বেআইনি ও দুর্নীতিগ্রস্ত বলে বাতিল করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়ই বহাল রাখে। অর্থাৎ, এই চাকরিগুলি বাতিল বলে সর্বোচ্চ আদালত স্বীকৃতি দিয়েছে। সুপ্রিম রায়ের পর এসএসসি ও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে জানায় যাঁরা এখনও পর্যন্ত “অযোগ্য” বলে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হননি, তাঁদের যেন কিছু সময় কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়া হয়। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের যেন ছাঁটাই না করা হয়। এই আবেদনের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে একটি সম্মতিসূচক আদেশ জারি করে। যার মূল নির্দেশগুলি ছিল আপাতত অযোগ্য না এমন প্রার্থীরা ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। পাশাপাশি রাজ্য এবং এসএসসি ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং সেই তথ্য এফিডেভিট আকারে কোর্টে দাখিল করতে হবে। যদি মে মাসে বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া হয়, এই সাময়িক রিলিফও উঠে যাবে। যেখানে রাজ্য লরকার স্পষ্ট করে জানায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে কেন রিভিউ পিটিশন দাখিল করার নাটক কেন? যেখানে তারা নিজেরাই সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আবেদন করেছিল, আদালতের সম্মতিমূলক আদেশে সম্মত হয়েছিল এমনকি ইতিমধ্যেই নতুন নিয়োগের কথা লিখিতভাবে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। তাহলে এখন হঠাৎ করে রিভিউ চাওয়ার অর্থ কী? তাহলে “যোগ্য/অযোগ্য আলাদা করব”—এই দাবি কি নতুন প্রতারণা নয়? প্রশ্নগুলি সহজ, কিন্তু জবাব পাওয়া কঠিন।
Discussion about this post