বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঠিক কেন এই যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে বললেন তা অবশ্য খোলসা করেননি তিনি। বাংলাদেশ যদি কোনও দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায় অথবা বাংলাদেশের প্রতি যদি কোনও দেশের আক্রমণ করার আশঙ্কা থাকে, তবে সেটা কোন দেশ? সেটা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। সম্প্রতি বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী রীতিমতো মহড়া দিতে শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই এখন জোড় চর্চা শুরু হয়েছে তাহলে কি বাংলাদেশকে কেউ আক্রমণ করতে পারে? নাকি ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশ পাকিস্তানের পক্ষেই যুদ্ধ ঝাপাতে পারে? ওয়াকিবহাল মহল অবশ্য এর মধ্যে কোন বিষয়টিকেই ঝেড়ে ফেলতে নারাজ। আবার একটা বিষয় মাথায় রাখতে হচ্ছে, সেটা হল মায়ানমারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব।
বিষয়টি খুলেই বলা যাক, গত মাস থেকেই দেখা যাচ্ছে মার্কিন সেনা করতো না বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ইউএস প্যাসিফিক ফ্লিটের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি ভোয়েল গত মাসেই বৈঠক করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের সঙ্গে। তারপরই দেখা গেল বাংলাদেশে ঘনঘন আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদস্থ কর্তারা। তারা বৈঠক করছেন ইউনূস প্রশাসনের সঙ্গে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, যে লেফটেন্যান্ট ফাইজুর রহমানকে নিয়ে এত জল্পনা, সেই তিনি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফর করে ফিরলেন। বাংলাদেশ মিডিয়ার দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে মানবিক সহায়তা করিডর তৈরি করতে চলেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে এও দাবি করা হচ্ছে ওই করিডর এর মাধ্যমে আরাকান আর্মি, লিবারেশান আর্মি, আরসা প্রভৃতি বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এর জন্য তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চাইছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত হওয়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউনূস প্রশাসনের সেতু বন্ধন করেছেন। আর এর জেরে কক্সবাজারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লজিস্টিক হাব তৈরির নামে নিজেদের সামরিক বেস তৈরি করছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ড্রোন বেসড এয়ারবেস তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ করে সে দেশের সামরিক জুন্টা শাসককে উৎখাত করার পরিকল্পনা করেছে। অপরদিকে জুন্টা বাহিনীকে সরাসরি সাহায্য করছে চিন। আর পিছন থেকে রাশিয়াও জুন্টা বাহিনীর পাশে আছে। এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জুন্টা বাহিনী বাংলাদেশে আক্রমণ চালাতে পারে বলেই গোয়েন্দা রিপোর্ট সামনে আসছে। ফলে সেই দিক থেকে মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ সেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলতে পারেন।
আবার একটা অংশ মনে করছে, সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে তার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সকলেই হুঙ্কার দিচ্ছেন যে ভারত এবার সন্ত্রাসবাদকে সমূলে বিনাশ করবে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একে একে শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের পরম বন্ধু হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পাকিস্তানের আইএসআই। এই পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও টার্গেট করতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। ফলে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশ এবং সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে তৎপরতার একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, মুহাম্মদ ইউনূস বিগত আট মাসের ব্যর্থতা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৈনতা ঢাকতে সুকৌশলে বাংলাদেশকে একটা যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চাইছেন। যাতে সেই যুদ্ধের জিগিরে নিজের ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে যায়।
Discussion about this post