বুধবার ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দিয়ে নির্বাচন নিয়ে একপ্রকার শেষ কথা বলে দিয়েছেন বিএনপির কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান তারেক রহমান জিয়া। লন্ডন থেকে তিনি ভার্চুয়াল ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি হুঁশিয়ারির সুরেই বলেছিলেন, ‘ভোট ডিসেন্বরেই হবে।’ অর্থাৎ বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট করাতে সরকারকে বাধ্য করাবে, এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন খালেদা-পুত্র। ঠিক এর পর দিনই জাপানে দাঁড়িয়ে পাল্টা হুঙ্কার দিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার সকালে টোকিওতে অনুষ্ঠিত ৩০তম নিক্কেই ফোরামের সম্মেলনের বক্তব্যে রাখতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সব দল নয়, বাংলাদেশে একটি মাত্র দলই ডিসেম্বরে ভোটা চায়। অর্থাৎ, সরাসরি তিনি বিএনপিকে আক্রমণ করলেন, এবং নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি যে একঘরে, সেটাও বোঝাতে চাইলেন। এখন প্রশ্ন হল, মুহাম্মদ ইউনূস এমন কি পরিস্থিতির মুখে পড়লেন যে তাঁকে জাপানে দাঁড়িয়েই বিএনপিকে জবাব দিতে হল?
উল্লেখ্য, বুধবার জাপানের টোকিওতে অন্য এক অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, বাংলাদেশে ভোট হবে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে। কেন তিনি এই দাবি করছেন তার ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছিলেন। অবশ্যই সেটা সংস্কার নিয়ে এটা বলাই বাহুল্য। এখন প্রশ্ন, মুহাম্মদ ইউনূসের নির্বাচন পিছনোর এত ইচ্ছা কেন? তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন, এবং বলেছিলেন, সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে একটা যোগ্য মন্ত্রিসভার হাতে দেশকে ছেড়ে দিয়ে যাবেন। যারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, মুহাম্মদ ইউনূসের মুখের কথা মিথ্যা বলেই প্রমানিত হচ্ছে। উল্টে তিনি যে ক্ষমতালোভী সেটাই যেন বারবার প্রমান হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী নেত্রী তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দাবিই করে আসছেন বিগত ৯ মাস ধরে। এখন একই সুর শোনা যাচ্ছে বিএনপির মুখেও। প্রসঙ্গত, বিগত কালের নির্বাচনের নিরীখে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যৌথ ভোট ৮০ শতাংশের বেশি। বাকি ভোট জামাত-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি ভাগাভাগি করে নেয়। তাই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী ও বিএনপি যদি একই দাবি করে তাহলে মুহাম্মদ ইউনূসের পায়ের তলার মাটি সরে যাবে এটা বলাই বাহুল্য। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাও যে ইউনূসের চালে ভুল ছিল এটা এখন তিনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। কারণ, যে রাষ্ট্রপুঞ্জকে তিনি সাদরে ডেকে এনে আওয়ামী লীগের অত্যাচার ও দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন, সেই রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টেই বলা ছিল পরবর্তী নির্বাচনে যেন কোনও রাজনৈতিক দলই বাদ না যায়। নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠ, অবাধ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক। অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নয় নির্বাচন। একই কথা ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বহু ইউরোপীয় দেশ বলেছে। কিন্তু ইউনূস সরকার অযাচিতভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির দাবি মেনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
অপরদিকে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, ভোটের সময় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। প্রতি বছর জুন, জুলাই মাস বাংলাদেশে বর্ষাকাল, সেই সময় বাংলাদেশের বহু অংশ জলের তলায় থাকে। ফলে ভোট করানোর আদর্শ সময় সেটা নয়। কিন্তু ইউনূস জেনে বুঝেই ওই সময়ের কথা বলছেন, যাতে হাতে আরও কয়েকমাস সময় নিতে পারেন। এই ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, দু’পক্ষের কথাতেই অবস্থানে অনড় থাকার ইঙ্গিত রয়েছে। আবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানও ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে টাইমলাইন বেঁধে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার করে এবং সংস্কারের নামে বারবার নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চেয়ে মুহাম্মদ ইউনূস আসলে ক্ষমতা দখলে রাখতে চাইছেন। এর পিছনে যে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটা বলাই বাহুল্য।
Discussion about this post