দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস প্রায় দশ মাসে এগারোবার বিদেশ সফর করেছেন। তিনি লন্ডন সফরের উদ্দেশ্যে রওনা হতেই এটা নিয়ে প্রবল আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, তিনি বাকি দশটি সফর থেকে কি নিয়ে এলেন? আদেও বাংলাদেশের কোনও উন্নতি হয়েছে? নাকি সরকারি টাকায় তিনি শুধু সফরই করে গেলেন? উল্টে লন্ডনে গিয়ে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা। শতাধিক বেশি মানুষ ইউনূসকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ করলেন। বলা যায়, জনগণের তাড়া খেয়ে পালিয়ে বাঁচলেন ইউনূস। শুধু তাই নয়, তাদের দাবি বা ক্ষোভগুলো অবাক করার মতো।
অনেকে বলছেন, এই ঘটনার পর যতবার তিনি বিভিন্ন দেশে যাবেন, এই আতঙ্ক তাকে তারা করে বেড়াবে। লন্ডনে বিক্ষোভকারীদের দাবি, বাংলাদেশের তদারকি সরকারের ক্ষমতায় রয়েছেন মহম্মদ ইউনূস। কিন্তু দেশের উন্নতি হয়নি। বরং দিনে দিনে দেশের মান কমেছে। অর্থাৎ এতদিন ধরে দেশের অন্দরে যে অভিযোগগুলি উঠে আসছিল, সেগুলি এখন বিদেশের মাটি থেকে উঠে এল। তারা বলছেন, এই দশ মাসে মানবধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এটাও ভারত একাধিকবার বলেছে। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকদের ওপরে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এমনকি শেখ হাসিনার আমলে যে সমস্ত জেহাদী, সন্ত্রাসবাদ জেলে ছিল, তাদের ছাড়া দিয়েছেন ইউনূস। ফলে দেশে বেড়েছে বিশৃঙ্খলা। পাশাপাশি চলছে মব কালচার। যেমন আনসারুল্লা বাংলা টিমের নেতাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার পর ভারতকে দু টুকরো করার হুমকি দিয়েছিল। আর এর দায় ইউনূসকেই নিতে হবে। আর তাই এই খবর আন্তর্জাতিক মহল পর্যন্ত পৌঁছতেই বিদেশের মাটিতে বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। এমনকি তারা বিভিন্ন পোস্টার দিচ্ছে। সেখানে লেখা, মুক্তি যুদ্ধের যে সম্মান, সেটা ক্ষুণ্ন হয়েছে মহম্মদ ইউনূসের আমলে। সেই ছবি ধরা পড়েছিল যখন বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন ইউনুস বলেছিলেন, দেশের মানুষ চায়, তাই এটা হয়েছে। অর্থাৎ কিছু কট্টরপন্থী এবং ছাত্র নেতাদের আগ্রাসী মনোভাবকে জনগণের মনোভাব বলে দিনের পর দিন চালিয়ে এসেছেন মহম্মদ ইউনূস। এমনিতেই বাংলাদেশের অন্দরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরোধী শক্তিগুলি মাথাচারা দিয়েছে। বিক্ষোভ, আন্দোলনে মুখরিত দেশের রাজপথ। এবার দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও বিক্ষোভের মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি থেকে সেটা স্পষ্ট নজরে আসছে। একদিকে ইউনূসের বিরুদ্ধে পোস্টার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অন্যদিকে হাসিনার পক্ষে পোস্টার নজরে আসছে। পাশাপাশি হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর মুক্তির দাবিতে ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা যে হোটেলে রয়েছেন, সেখানে শত শত মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তারা। এছাড়াও লন্ডনের বিভিন্ন জায়গাতে প্রতিবাদ বিক্ষিপ্তকারে লক্ষ্য করা গিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের আগেই মনে করা হচ্ছিল, তিনি বিক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন। তার কারণ বাংলাদেশের বাইরে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সমর্থক ও নেতা রয়েছেন লন্ডনে। আর সেখানেই আওয়ামী লীগের প্রতিরোধের মুখেই পড়লেন তিনি। তারা এককাট্টা হয়ে এই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে বলে খবর। এটি একটি দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে। কারণ বিদেশের মাটিতে কোনও রাষ্ট্রপ্রধানকে এভাবে কোনও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়নি সম্ভবত। বলছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
এই মুহূর্তে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয় শঙ্কর রয়েছেন বেলজিয়ামে। এমনকি তিনি ইয়ুরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকের পর ঘোষণা করে দেওয়া হয়, ভারতের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক জোরদার করা হবে। শুধু তাই নয়, ভারতের সঙ্গে ফ্রী ট্রেড এগ্রিমেন্ট করা হবে। অর্থাৎ ভারতের কূটনৈতিক স্টাটাজির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্প কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেন সেটাই দেখার। কারন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মধুর নয়। কারণ আমেরিকা এখন বাংলাদেশের হয়ে কথা বলছে। বিশেষ করে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার পর থেকে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশের একের পর এক হয়ে চলা বিশৃঙ্খল ঘটনা গুলিকে মদত দিচ্ছে। একদিকে মোহাম্মদ ইউনুস বিদেশের মাটিতে গিয়ে জনগণের তাড়া খাচ্ছেন, আর অন্যদিকে ভারতের শীর্ষ নেতৃত্ব অন্য দেশের মাটিতে গিয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ এই পার্থক্য গুলোই বুঝে উঠতে পারে না।
Discussion about this post