বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য ক্ষমতা সিংহাসন! ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপি যখন সরকারের বিরুদ্ধে, তখন মহম্মদ ইউনুস লন্ডনে পৌঁছে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে এবং বাংলাদেশের আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার দলকে বোঝাপড়ার একপ্রকার বশে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে বিএনপির পাশাপাশি আরও একটি গোষ্ঠী সরব হয়েছিল অন্তরবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে। সেটি হলো বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। তবে কি সেনাবাহিনী এবার মোহাম্মাদ ইউনুসের বশে চলে গেল?
বেশ কিছুদিন আগেই সেনাবাহিনীর প্রধানের তরফ থেকে দাবি তোলা হয়েছিল আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে বাংলাদেশে। সেই দাবি এতটাই সুস্পষ্ট ছিল যে অফিসার্স অ্যাড্রেস এর মাধ্যমে তিনি সেরা সদস্যদের জানিয়েছিলেন দ্রুত দেশের নির্বাচন করে স্থায়ী সরকারের হাতে দেশের ক্ষমতা তুলে দিয়ে সেনাবাহিনী দ্রুত ব্যারাকে ফিরতে চায়। সেই অফিসার অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধানের ওই বার্তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। কিন্তু এরপরই দেখা গিয়েছিল ৭ই জুন ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে শাস্ত্রেক উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাপ্রধান। স্বাভাবিক ভাবেই তখন প্রশ্ন উঠেছিল কি কারণে এই সাক্ষাৎ সেনাপ্রধান ও প্রধান উপদেষ্টার? যদিও এখনও পর্যন্ত এর স্পষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায়নি কিন্তু বারংবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে সেনাপ্রধান। বলা হয়েছে, তবে কি জেনারেল ওয়াকার জামান এবার মোহাম্মদ ইউনুসের দলে নাম লেখাতে চলেছেন? নির্বাচন নিয়ে তবে কি সেনাবাহিনীকে বশে আনতে সক্ষম হলেন মোহাম্মদ ইউনুস?
এর মাঝে সবচেয়ে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জুলাই সনদ। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন, সেই বৈঠকে ছাত্র উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ধারণা ছিল দেশে নির্বাচন করানোই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। আমরা সকলেই দেখেছিলাম গত বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সরকার পতনের পর তৎপরতার সঙ্গে সে দেশের তিন বাহিনীর প্রধান পৌঁছে গিয়েছিলেন বঙ্গভবনে এবং সেখানে উপস্থিত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন শুপুর একটি বক্তব্যের ব্যবস্থা করেন তারা। ঐদিন তিন বাহিনীর প্রধানের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি স্পষ্ট তৈরি ঘোষণা করেছিলেন খুব শীঘ্রই মুক্তি পেতে চলেছেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, এবং দেশে অন্তর্ভুক্তি সরকার গঠন করা হবে এবং দ্রুত নির্বাচন করানোই হবে এই সরকারের প্রধান কাজ। অর্থাৎ দিন বাহিনীর প্রধান শহর রাষ্ট্রপতির ধারণা ছিল অন্তর্ভুক্তির সরকারের হাত ধরে দেশে দ্রুত নির্বাচন হবে এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে বাংলাদেশ ে সেই সময় সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হয়ে উঠবে বিএনপি ফলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে, এরপর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বিএনপির হাতে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস তিনি যে সংবিধান বদলের মস্ত পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের আসছেন সেই বিষয়টি তখনো আন্দাজ করতে পারেননি সেনাবাহিনীর প্রধান।
এরপর গত বছর ডিসেম্বরে ছাত্র সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সারজিস আলম প্রমুখের রাই জুলাই ঘোষণাপত্র ডিসেম্বরের শেষ দিনে ঘোষণা করা হবে বলে খবর প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল। কিন্তু এরপর প্রধান ও প্রতিষ্ঠার তরফ থেকে জানানো হয় সমস্ত দলের ঐক্যমতের উপর ভিত্তি করে এই জুলাই সনদ রচনা করা হবে যার ফলে ঐক্যমত কমিশনের ওপর জুলাই সনদের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। এরপর দেখা যায় জুলাই সনদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানকে কবরস্থ করার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে আর তারই বিপরীতে অবস্থান করতে শুরু করে বিএনপি। বরাবরই দেখা গিয়েছে বিএনপি এ জুলাই সনদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবি তুলেছে। এমনকি নির্বাচন নিয়েও পথে নামতে দেখা গিয়েছে দলটিকে। এরপর হঠাৎ করেই নির্বাচন নিয়ে সমঝোতায় আসার জন্য অন্তর্ভুক্তি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন পাড়ি দিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। আর এই বৈঠকের পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে কিছুটা আপস করতে দেখা গেল দুই পক্ষকে। আবার এই বৈঠক থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে কঠোর পন্থী জামাতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি। পাশাপাশি যতটা করা সুরে সরব হয়েছিল বিএনপি ততটাই এখন মোঃ ইউনুসের বশে আসতে দেখা যাচ্ছে বিএনপি কে। বিএনপির মত একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল যদি অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বারা প্রভাবিত হয় তবে কি সেনাবাহিনীও সেই একই পথে হাটবে? এখন সেটাই দেখার।
Discussion about this post