বাংলাদেশে মব কালচার অব্যাহত। কিছুতেই লাগাম টানতে পারছে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর এই বিষয়ে সেনাপ্রধানকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে বাংলাদেশের বহু মানুষ। কারণ শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী কালীন সরকার গঠন হওয়ার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান বলেছিলেন, দেশের দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন। কিন্তু কোথায় কি! দেশ আরও বিশৃঙ্খল জায়গায় যাচ্ছে। অথচ টনক নড়ছে না দেশের সরকারের, দেশের প্রশাসনের এবং সর্বোপরি সেনাবাহিনীর।
আওয়ামী লীগের সময়কার সমস্ত নেতা, কর্মী বা পদাধিকারীদের উপর মব চালাচ্ছে উন্মুক্ত জনতা। এবার দেখা গেল সাবেক নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে
তার উত্তরার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে জুতোর মালা পরিয়ে আটক করে কিছু মানুষ। তারা নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী বলে দাবি করছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনারকে প্রথম পুলিশ আটক করেনি। আগে কিছু মানুষ তাকে আটক করে নিয়ে যায়, তারপর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ গ্রেফতার করে। জানা যায়, তার বিরুদ্ধে বিএনপি একটি মামলা করেছিল। আর সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু উন্মুক্ত জনতা কেন? জানা যায়, কে এম নুরুল হুদা শুমাত্র সাবেক সচিব বা নির্বাচন কমিশনার নয়, তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর যোদ্ধা ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে ক্যাপ্টেন হুদা নামে পরিচিত। আর তাকেই এইভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা, তাও আবার পুলিশের সামনে।
যদিও এই ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাতে লেখা, অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর আক্রমণ এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি। আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ। মব সৃষ্টি করে উশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যারা মব করেছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কি সরকার বা প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তাহলে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার অর্থ কি? ধানমন্ডির 32 নম্বর বাড়ি ভাঙ্গার পরও সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তখনও কাউকে কোনও গ্রেফতার বা কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার খবর উঠে আসেনি। তাহলে কি শুধুমাত্র দায় সারতেই এই বিজ্ঞপ্তি?
এদিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের জন্য তোরজোর করা হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের নির্বাচন হবার মতো কি কোনও পরিস্থিতি রয়েছে? এতগুলো মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে যে পরিমাণ ফোর্স দরকার বা সদিচ্ছা দরকার সরকারের, সেটা চোখে পড়ছে না। অন্যদিকে সেনাবাহিনী কোথায়? তাদের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রয়োজন হলে সেনাপ্রধান জরুরি অবস্থা চালু করে দেশকে শৃঙ্খলা বদ্ধ করুক। বলছেন দেশেরই বহু মানুষ। এই সরকারের ওপর আস্থা নেই সাধারণ মানুষের। তাই জরুরি অবস্থা চালু করে দেশকে শৃঙ্খলা বোদ্ধ করে, নির্বাচনের ডাক দেওয়া উচিত বলে বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
Discussion about this post