ইলন মাস্কের স্টারলিংকের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে যেতে চলেছে বাংলাদেশ। এই ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকার পরও রহস্যজনক কারণে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে চলছে বাংলাদেশকে। এই মুহূর্তে বাংলদেশে সবথেকে বিতর্কিত বিষয় হল, মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়টি। আর সেটাকে ঘিরেই বিপদের আশঙ্কা। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি স্টার্লিংকে সুবিধা করতে দিতেই ইউনূস বিপদে ফেলে দিলেন বাংলাদেশকে?
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস ইলন মাস্ককে চিঠি লিখেছিলেন। তার স্টারলিঙ্কের মধ্যে বাংলাদেশকে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার জন্য। এবং ৯০ দিনের মধ্যেই পরিষেবা দিতে পারে, তার ব্যবস্থা তারা করবে। সেটা করা হয়েছিল। এখানেও প্রশ্ন উঠেছিল, এখানে কোন রাজনৈতিক ইস্যু জড়িয়ে রয়েছে কিনা! তবে লাইসেন্স দেওয়ার পর শর্তগুলো মানছে না স্টারলিংক। কোনরকম নিয়ম নীতি তারা তোয়াক্কা করছে না। আর এটা করলে, দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার হয়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লাইসেন্সের যে গাইডলাইন গুলি রয়েছে, সেই গাইডলাইনের সেকশন ১৫ অনুযায়ী, চুক্তিবদ্ধ যে কোন প্রতিষ্ঠানকে আগে নির্মাণ করতে হবে। বাংলাদেশের যেকোনও ডেটা ট্রাফিক দেশের ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে হয়ে পাস করতে হবে।
সেকশন ২৬ এর ৪ অনুযায়ী, আইনের সমস্ত কিছু মেনে চলতে হবে। এল আই এর সুযোগ রাখতে হবে।
অর্থাৎ বাংলাদেশের যেকোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে স্টার্লিং অন্য কোথাও পাচার করছে কিনা সেটা মনিটারিং করতে পারবে বাংলদেশে কর্তৃপক্ষ। এই ডিপিআই ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু স্টারলিংক আই পি এল সির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর এবং ওমানে ডেটা ট্রান্সফার করবে। কিন্তু ডিপিআই তো আইপিএস এর সঙ্গে তো সম্পৃক্ত নয়। ডিপিআই ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু তারা এটা কেন করতে চাইছে? তারা ডিপিআইকে পাশ কাটিয়ে আই পি এল সির মাধ্যমে ডেটা পাশ করতে চায়। যাতে কোনোভাবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ না জানতে পারে। এদিকে তারা তাদের কার্যক্রম খুব তাড়াতাড়ি শুরু করতে চায়। বিটিআরসি কে পাশ কাটিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ফয়েজ আহমেদ তৈয়বের কাছে চিঠি যায়। সেখানে লেখা হয়, ১৩ই মে থেকে তারা পরীক্ষামূলকভাবে কমার্শিয়াল টেস্টে যেতে চাই। আর সেখানেই ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব সেই চিঠিতে ৯০ দিনের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আদেও কি কমার্শিয়াল টেস্টে তারা গিয়েছে? অনেকে আবার বলছেন, যে কার্যক্রমের জন্য তার কাজটি করছে। সেটি ন্যূনতম ছয় মাস থেকে এক বছর লাগার কথা। তাহলে তাদের উদ্দেশ্য কি? আশঙ্কা করা হচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্য কোনও দেশের পাচার করে দিতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষের হাতে মনিটরিং করার সুযোগ থাকছে না। এমনকি আরাকান আর্মির স্বার্থে যদি কোনও রকম কর্মকাণ্ড চালায়, সে ক্ষেত্রে বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশ। এখানে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিসের উদ্দেশ্যে এই অনুমোদন দিয়েছেন!
কর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিবৃতি দিয়েছেন। আর এতেই ভয় পাচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অর্থাৎ হাসিনা জ্বরে কাবু ইউনূস। কীভাবে ফেসবুকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম থামানো যায়, তারই নানাভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, মহম্মদ ইউনূস ফেসবুকের মেটার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এই কার্যক্রম কিভাবে বন্ধ করা যায়, তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কোনও পেজ থাকবে না? যারা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেন, তাদেরও কি শনাক্ত করা হবে? আসলে কি হতে চলেছে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ?
জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস ফেসবুকের কোম্পানি মেটার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে। বৈঠক পরবর্তী ছবিও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছে। খবর, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, থ্রেডস, ইনস্টাগ্রাম সহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং যোগাযোগ প্লাটফর্ম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেটাকে, সম্প্রীতি ব্যাহত করে এবং ঘৃণা ছড়ায়, এমন কার্যকলাপ মোকাবিলার জন্য উপায় খুঁজতে এই আলোচনা। মহম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, এটি একটি বড় সমস্যা। এটার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মেটার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পাবলিক পলিসিবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন মিলনার এবং পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রুজান সারওয়ার। বৈঠকে ইউনূস জানান, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। একটি ভুল শব্দ গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করে দিতে পারে। কিছু লোক ইচ্ছাকৃত এই কাজটি করে। জানা যায়, মেটা কর্মকর্তা মিলনার বলেন, মিথ্যা তথ্য প্রতিরোধে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে তারা প্রস্তুত। বিশেষ করে আগামী বছর আসন্ন নির্বাচনের আগে। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার কর্তৃপক্ষ এবং মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন বলেও জানান তিনি।
এখন থেকেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এমন ঘৃণা বা উস্কানিমূলক কথা চাউর করা হচ্ছে, অন্যদিকে একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেও ঘৃণা বা অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা কি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে এই কথাটি বলেছেন? যেভাবে দেশের বাইরে থেকে নির্দেশ দিয়ে মব কালচার করা হচ্ছে বাংলাদেশে, সেটার বিরুদ্ধে কি কোনও অ্যাকশন নেবে অন্তর্বর্তী সরকার? তার জন্য কি মেটাকে জানানো হয়েছে? যদি সেটা করে থাকে, তবেই অপ তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই হবে। তবেই বোঝা যাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছে। বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Discussion about this post