গৌতম বুদ্ধ হলেন বৌদ্ধধর্মের ২৮তম বুদ্ধ। যাঁর তত্ত্ব অনুসারে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। তিনি সিদ্ধার্থ গৌতম, শাক্যমুনি বুদ্ধ অথবা শুধুমাত্র বুদ্ধ নামে ভারতবর্ষ ছাড়াও গোটা বিশ্বে পরিচিত। আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা। বুদ্ধ পূর্ণিমা বৈশাখী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে পূর্ণিমা তিথিটির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। বুদ্ধ পূর্ণিমা এবছর পড়েছে ২৩ শে মে তারিখে, এই তারিখে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বুদ্ধধর্মে গৌতম বুদ্ধকে ভগবান হিসাবে পুজো করা হয়।
আর এই দিনেই বেশিরভাগ মানুষ বুদ্ধগয়ায় ভিড় জমান। শুধু ভারতবর্ষ থেকে মানুষ নয়, দেশ বিদেশ থেকে নানান ধর্মাবলম্বীরা ভিড় জমান বুদ্ধগয়ায় । দেশের বিভিন্ন বুদ্ধ গয়ায় আজকের এই দিনটি উদযাপিত হচ্ছে, এই পূর্ণ তিথিতেই স্নান সারেন ভগবান বুদ্ধ। শুধু যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই বিশেষ দিনটিকে পালন করছেন তা কিন্তু নয়, হিন্দু ধর্মের মানুষরাও এই বিশেষ তিথিতে বাড়িতে পূজা, অর্চনা করেন গৃহের মঙ্গল কামনার জন্য। তাছাড়া মন্দিরে গিয়ে পুজো দেওয়া থেকে বিভিন্ন শুভ কাজের জন্য এই দিনটিকে মানেন প্রতিটি ধর্মের মানুষ। অন্যদিকে গৌতম বুদ্ধকে অনেকেই বিষ্ণুর সপ্তম অবতার হিসাবে মানেন, এই দিনেই যেহেতু তিনি (গৌতম বুদ্ধ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাই এই দিনটির জ্ঞান প্রাপ্তির দিন হিসাবে বিশেষ গুরুত্ব আছে। বুদ্ধগয়া বা বোধিগয়া ভারতের বিহার রাজ্যের একটি শহর, এটি বৌদ্ধ ধর্মালম্বিদের অন্যতম পীঠস্থান। আঠারো শতকে এই স্থানটি বুদ্ধগয়া নামে পরিচিতি পায়। সেখানে অবস্থিত মহাবোধি মন্দির অন্যতম। এখানে গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। মহাভারতে উল্লেখিত, নিরঞ্জন নদীর পাড়ে সম্রাট অশোক এই ধর্মস্থানে প্রথম বৌদ্ধ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। উনিশ শতকের দিকে আলেকজান্ডার ক্যানিং হাম মন্দিরটির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। বুদ্ধ পূর্ণিমায় বুদ্ধগয়ায় ঘুরতে গেলে কোন কোন স্থানে যাবেন।
মহাবোধি মন্দির
মহাবোধি মন্দির বুদ্ধগয়ায় অবস্থিত একটি বৌদ্ধ মন্দির। এখানে সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধত্ব লাভ করেন। বুদ্ধগয়া ভারতের বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনা শহর থেকে ৯৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মন্দিরের পশ্চিম দিকে পবিত্র বোধিবৃক্ষটি অবস্থিত। এই গাছটির আরেকটি নাম বোধিমণ্ড এবং সেখানে অবস্থিত মঠটির নাম বোধিমণ্ড বিহার। মন্দিরের উচ্চতম শীর্ষটির উচ্চতা ৫৫ মিটার। পাল রাজারা, মন্দিরের ভিতরে সোনার জল করা, কষ্টি পাথরের বুদ্ধের বসে থাকার মূর্তি তৈরি করেছিলেন। জানা যায়, দিনের আলোয় মহাবোধি মন্দিরে বিশ্রাম নিলে পরম শান্তি অনুভব করেন ভক্তেরা। মহাবোধি মন্দির হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয়ের কাছে চূড়ান্ত শ্রদ্ধার ।
প্রার্থনা কক্ষ
সিদ্ধার্থ বোধিসত্ত্ব লাভ করে গৌতম বুদ্ধ হওয়ার পর, ৭ টি ভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। এই স্থানটি তার মধ্যে অন্যতম। এই প্রার্থনা কক্ষটি ‘অনিমেষলোচন চৈত ‘ নামেও পরিচিত।
রাজ্যতন গাছ
মন্দিরের দক্ষিণ পশ্চিম অংশে এই গাছটি অবস্থিত। জানা যায়, গৌতম বুদ্ধ যে দীর্ঘ ধ্যান করেছিলেন, সেই ধ্যানের শেষ রাত কাটিয়েছিলেন এই গাছের তলায়। তাই বৌদ্ধগ্রন্থে এই গাছের বিশেষ গুরুত্ব আছে।
রত্নগড় চৈত
মন্দিরের প্রবেশদ্বারের একদম উত্তর – পূর্ব দিকে অবস্থিত এই রত্নগড় চৈত। দীর্ঘ দিনের তপস্যার পর সিদ্ধার্থ নির্বান লাভ করে গৌতম বুদ্ধ হয়েছিলেন। তার নির্বাণ লাভের চতুর্থ সপ্তাহটি তিনি এখানে কাটিয়েছিলেন। তাই এই স্থানটির গুরুত্বও খুব বেশি।
পদ্ম পুকুর
সিদ্ধার্থ নির্বান লাভের ষষ্ঠ সপ্তাহটি পদ্মপুকুর চত্বরে বিশ্রাম নিয়েছিলেন । তাই এই স্থানটির বিশেষ তাৎপর্য আছে। মন্দিরে দক্ষিণ দিকে এটি অবস্থিত।
আজপাল গাছ
গৌতম বুদ্ধ যখন নির্বাণ লাভ করেছিলেন , সেই নির্বাণ লাভের পঞ্চম সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন এইখানে। আজপাল বৃক্ষের তলায় তিনি পঞ্চম নির্বাণে বিশ্রাম নিয়েছিলেন বলে, এই স্থানের ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম।
চনক্রমনা
কথিত আছে, এই স্থানেই গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভের তৃতীয় সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন। এই স্থানটিকে নিয়ে অনেকেই অনেক রকম মত পেশ করেন। যদিও বৌদ্ধধর্মে এই স্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ন।
এগুলো ছাড়াও বুদ্ধগয়ায় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন উচ্চতম বুদ্ধমূর্তি , চিনা মন্দির, জাপানিজ মন্দির, সুজাতা কুটির , সুজাতা মন্দির, ইন্দোনেশিয়ার মন্দির, মনাস্ট্রি , মুচলেন্দ লেক প্রভৃতি। তাই বুদ্ধ পূর্ণিমা ছাড়াও অন্যান্য সময় পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় বিহারের এই স্থানে। bযেখানে গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধিলাভ করেছিলেন।
Discussion about this post