মাত্র ২৭ বছর বয়েসেই লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী। চমকপ্রদ তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। তিনি দেবাংশু ভট্টাচার্য, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের যুব নেতা এবং তৃণমূল আইটি সেলের প্রধান। সেই দেবাংশু এবার রাজ্যের সবচেয়ে আলোচিত তমলুক লোকসভা আসনের প্রার্থী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। যদিও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর তমলুক থেকে হেরে গিয়েছেন তৃণমূলের এই তরুণ তুর্কি। দেবাংশু তৃণমূলের জয়ের থিম সং “খেলা হবে” গানের স্রষ্টা। যে গান এতটাই জনপ্রিয় যে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই গানকে নিজেদের প্রচারে ব্যবহার করে। আপাত অর্থে বলতে গেলে “খেলা হবে” গানের স্রষ্টা দেবাংশু ভট্টাচার্যই লোকসভার ময়দানে খেলতে পারলেন না।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেবাংশু লিখেছিলেন এই “খেলা হবে” গান। স্থানীয় রাজনৈতিক স্বাদ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিকে তুলে ধরেই তৃণমূল প্রচারের গানটি লিখেছিল দেবাংশু। ডিজে মিউজিকের তালে দেবাংশুর খেলা হবে গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু নিন্দুকেরা বলেন, খেলা হবে স্লোগান আদতে বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক দল প্রথম ব্যবহার করেছিল। দেবাংশু সেটাই অনুকরণ করেছেন। সে যাই হোক, তৃণমূল সরকাকের কন্যাশ্রী, লক্ষীর ভান্ডার-সহ বিভিন্ন জনকল্যাণকর প্রকল্প এই গানে তুলে ধরেছেন দেবাংশু। যা একুশের নির্বাচনে তৃণমূলকে জেতাতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে, এ কথা বলাই বাহুল্য। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও খেলা হবে গান রাজ্যের সর্বত্র বাজিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তমলুকেও খেলা হবে বলেছিল শাসকদল। কিন্তু সেখানে খেলেছে বিজেপি। বলা ভালো সেখানে খেলেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বরাবরই অধিকারী পরিবারের গড়। কলকাতা বিচারপতির পদ থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে বিজেপিতে যোগদান করা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য বাচ্ছা হয়েছিল তমলুক আসন। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান এবং প্রার্থী হওয়া নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি কটাক্ষ করেছিছিলেন “(বিচারপতির) বেঞ্চে বসা বিজেপি বাবু” বলে। এমনও দাবি করেছিলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাঁর পরাজয় নিশ্চিত। এরপর হলদি নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় নির্বাচন কমিশনের শাস্তির মুখে পড়েন। তিনি ২৪ ঘন্টার জন্য প্রচার করতে পারেননি। মনোনয়ন পেশের সময় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ হয় তমলুকে। অভিজিৎ সহ কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় এফআইআর হয়।
শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট থেকে গ্রেফতারি এড়ান প্রাক্তন বিচারপতি। ভোটের দিন তমলুক জুড়ে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করে তৃণমূল। বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয় ভোটের আগে ও পরে। দুইজন রাজনৈতিক কর্মী খুনের অভিযোগ ওঠে। তবুও তমলুকে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জয় আটকাতে পারেনি তৃণমূল। এমনকি খেলা হবে গানের স্রষ্টা তৃণমূলের যুব নেতা হেরে যান ওই আসনে। তমলুকজুড়ে দেবাংশু প্রচার করেছিলেন, হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি যাওয়ার পিছনে দায়ি প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। খেলা হবে গান লিখে রাজ্যজুড়ে তৃণমূলী ঝড় তোলা দেবাংশু তমলুকে নিজের আসনেই ঝড় তুলতে ব্যর্থ। বলা ভালো, লক্ষ লক্ষ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের রাজনৈতিক খেলার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে, প্রথমবার ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে খেলতে পারলেন না নিজেই।
Discussion about this post