জয়ন্ত সিং এর প্রাসাদোপম অট্টালিকা বেআইনি। জানিয়ে দিল কামারহাটি পুরসভা। পুরসভার অগোচরে কি করে এত বড় বেআইনি নির্মাণ? প্রশ্ন উঠছে। পুকুরের পাড় ঘেঁষে দুধসাদা প্রাসাদোপম অট্টালিকা। প্রাসাদটি একঝলকে দেখলে মনে হবে কোন তারকার বাড়ি। গত দুদিনে টিভির পর্দায় ভেসে ওঠা অট্টালিকাটি কার এখন প্রায় সকলেই জানেন। কামারহাটি বাহুবলী নেতা জয়ন্ত সিং এর। সাধারণ দুধ ব্যবসায়ী থেকে রাতারাতি তার উত্থান রাজ্য রাজনীতির আলোচ্য বিষয়। জানা যাচ্ছে পুকুর বুজিয়ে বাড়িটি তৈরি করা হচ্ছিল। এখন প্রশ্ন অনুমোদন কি ছিল কামারহাটি পুরসভার? প্রশ্ন উঠতেই পুরসভার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় এই নির্মাণটি অবৈধ। পুরসভা থেকে কোন অনুমোদনই দেওয়া হয়নি।
এই অট্টালিকা নিশ্চয়ই রাতারাতি ওঠেনি। পুকুর ঘেঁষে প্রাসাদোপম অট্টালিকা উঠে গেল অথচ কেউ জানতেই পারল না। পুরসভার নজরে পড়ল না? কি করে সম্ভব? তাহলে কি বাহুবলী জয়ন্ত সিং এর দাপটে পুরসভাও চুপ করে ছিল? বৃহস্পতিবার কামারহাটির পুরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, “ওই বাড়ি তৈরির কোনও অনুমোদন পুরসভা দেয়নি। জমিটিরও কোনও রেকর্ড পাওয়া যায়নি।” পাশাপাশি পুর চেয়ারম্যানের সাফ দাবি তাঁর পক্ষে সব কিছু জানা সম্ভব নয়। তাহলে কাউন্সিলর কি করছিলেন? তাঁর নজর থেকে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কথা তো নয়। জানা যাচ্ছে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি স্বপন মণ্ডল বছর দেড়েক আগে মারা গিয়েছেন। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, তার পর থেকে ‘জায়ান্ট’ ছিলেন অলিখিত পুরপ্রতিনিধি। এলাকায় জয়ন্ত সিং এর অঙ্গুলিহেলনে সমস্ত বেআইনি নির্মাণ ছাড়পত্র পেত। এমনকি আড়িয়াদহের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইমারতি দ্রব্য সংগ্রহ করে এই নির্মাণটি গড়ে তোলেন জয়ন্ত। অর্থাৎ পুরো ঘটনার পেছনে সিন্ডিকেটের ছায়া রয়েছে।
শুধু বাড়ি নয়। বাড়ির চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে একাধিক দামি গাড়িও। সূত্রের খবর গাড়ির মালিক জয়ন্তের শাগরেদ সৈকত মান্না ওরফে জঙ্ঘা। সাদামাটা ঘরের ছেলে জঙ্ঘা এত দামি গাড়ি পেলেন কোথায়? সূত্র বলছে, গাড়িটি শাগরেদের নামে কেনা হলেও মাসিক কিস্তির টাকা দিত জয়ন্ত। শুধু তাই নয় বাহুবলী হয়ে ওঠার পথে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের বেছে নিতেন জয়ন্ত। যাদের পকেটে টান আছে। এরপর তাদের সিন্ডিকেটে নামিয়ে দিতেন। মাসে মোটা টাকা রোজগার করতেন তাঁরা। টাকা ও ক্ষমতা দুটোই এসে যাওয়ায় জয়ন্তর দল ক্রমশই ভারী হতে থাকে। বাহুবলী নেতাকে সন্তুষ্ঠ করতে সিন্ডিকেটের যুবকেরা মিলে প্রতি মাসে ক্লাব তহবিলে হাজার দশেক টাকা করে জমা রাখত। জয়ন্তের বিরোধী বলে পরিচিতদের অনেকেরই অভিযোগ, শাগরেদদের লাভের অংশ সরাসরি না নিলেও, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকে ‘খুশি’ রাখতে আয়োজিত নানা অনুষ্ঠানে তা খরচের নির্দেশ যেত জয়ন্তের থেকে। এই সব ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে কোন প্রভাবশালীর হাত মাথায় না থাকলে এমন হওয়া সম্ভব নয়। তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের দিকে আঙুল উঠলে মদন ও সৌগত আগেই জানিয়েছেন তাঁরা জয়ন্তকে চিনলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এমনকি সাংসদ সৌগত রায়ের মতো মদনও বলেন মাঝরাতে হুমকি ফোন করা হয়েছে। গণ পিটুনির ঘটনায় জয়ন্ত সিং আগেই গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর শাগরেদরাও কেউ কেউ জেলে। এই পরিস্থিতিতে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোয় কিনা সেটাই এখন দেখার
Discussion about this post