এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যে একটা সরকার আছে সেটা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশে সদ্য গজিয়ে ওঠা তুচ্ছ এক রাজনৈতিক দল এবি পার্টির নেতার এই জ্বালাময়ী ভাষণ থেকেই বোঝা যায়। দেশের সেনাবাহিনীর মর্যাদাহানীকর এই ধরণের কোনও বক্তৃতা কার্যত রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল। অন্য কোনও দেশ হলে এতক্ষনে ওই নেতা এবং তাঁর ধামাধারীদের গ্রেফতার করে গারদে ভরা হতো। কিন্তু দেশটার নাম বাংলাদেশ, যেখানে সত্যিই সরকার বলে কিছু নেই। যিনি এই বক্তৃতা দিচ্ছেন, তার নাম ব্যারিস্টার ফুয়াদ, আর তার পাশেই সাদা টি-শার্ট পরে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তার নাম তাজুল ইসলাম। ইনিও একজন আইনজীবী, নিশ্চয়ই চিনতে পারছেন ইনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান আইনজীবী। অর্থাৎ সরকারি আইন বিভাগের সর্বোচ্চ একটি পদে বসে আছেন, সেই তাজুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়েই ব্যারিস্টার ফুয়াদ সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে কুরুচি কর ভাষায় আক্রমণ করে চলেছেন। সেনাপ্রধান কে তিনি সার মেয়র সঙ্গে তুলনা করতেও ছাড়লেন না। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে নীরব মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন। সরব হবেনই বা কি করে, বক্তৃতা প্রদানকারী ওই তুচ্ছ নেতার পাশে দাঁড়িয়ে স্বয়ং প্রধান সরকারি আইনজীবী।
বিগত ২-৩ দিন ধরে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটাই আলোচনা চলছে, সে দেশে কি সামরিক শাসন জারি হতে চলেছে? নাকি ইমারজেন্সি বা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে? এর অন্যতম কারণ হলো, গত দুদিন ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান একের পর এক বৈঠক করে চলেছেন। যা নিয়ে সরগরম ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। রবিবার তিনি ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী সাভার ও মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানকারী শীর্ষ সেনাকর্তাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামাণের ঘনিষ্ট সামরিক কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর আমরা দেখলাম সোমবার তিনি আরো বড় আকারে এক বৈঠক করলেন। রীতিমতো হুইপ জারি করে বাংলাদেশের সমস্ত সেনা ছাউনির উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকে থাকার নির্দেশ জারি করেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। যাকে মেগা বৈঠক বললেও কম বলা হয় না। কিন্তু গত দুদিন ধরে সেনাপ্রধান কিসের এত বৈঠক করলেন? আর সেই বৈঠক থেকে তিনি কি কোনও বার্তা দিতে পারলেন?
শুরুটা করেছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণবঙ্গের সংগঠক তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে সেনাবাহিনীকে নজীরবিহীন আক্রমণ করেন। তারই সুর টেনে তদারকি সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানকে কাঠগড়ায় তুলে দেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সেনাবাহিনী রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বা সংশোধিত আওয়ামী লীগকে নতুন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জায়গা করে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির বক্তব্য, সেনাবাহিনী অযাচিতভাবে দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছে। এই অভিযোগ, অন্য ভাবেও তোলা যেত। কিন্তু হাসনাত, আসিফরা প্রকাশ্যে ফেসবুক পোস্টে সেনাবাহিনীর দিতে সরাসরি আঙুল তুলে অন্যায় করেছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি-ও এই নোংরা প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু জাতীয় নাগরিক পার্টির মতো, সদ্য গজিয়ে ওঠা এবি পার্টিও সেনাবাহিনীকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করে চলেছেন। ক্রমাগত তাঁদের সুর চড়ছে। এমনকি তদারকি সরকারের কেউ কেউ এই সমস্ত দলের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সমর্থন করছেন। যা কার্যত নজীরবিহীন। কোনও একটা দেশের সেনাবাহিনী হল সেই দেশের মেরুদণ্ড। দেশের অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর মর্যাদা এবং দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাঁদের দিকে আঙুল তোলা মানে দেশের সার্বভৌমত্বকেই চ্যালেঞ্জ করা। কিন্তু এই সমস্ত তথাকথিত ছাত্র নেতারা সেটাই করে চলেছে। ফলে বোঝা যাচ্ছে, কেউ বা কারা তাঁদের উস্কানি দিচ্ছে। সূত্রের খবর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশ চাইছে যে বা যারা এভাবে বাহিনীকে অপমান করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু সূত্রের খবর, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান গত দুদিন ধরে বৈঠকে সব পক্ষকেই আপাতত শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যে ঐক্য স্থাপনে জোর দিয়েছেন। এবং কিভাবে এই পরিস্থিতিতে দেশে দ্রুত নির্বাচন করানো যায় এবং এই ধরণের দেশবিরোধী শক্তিকে পরাস্ত করা যায় তাঁর রূপরেখা তৈরি করেছেন। ফলে একটা বড় পদক্ষেপ সেনাবাহিনী নিতেই পারে। তবে সবদিক সামলে নিয়ে। এমনটাই মনে করছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মহল।
Discussion about this post