জলকে জীবন বলা হয়। আমাদের জীবন রক্ষার্থে জল একান্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য জলের একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ জল খেলেও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান না করলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম অসুস্থতা দেখা দেয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে খুব বেশি জল খেয়ে নিলেও একই ভাবে শরীরের নানান সমস্যার তৈরি হয়। একে বলে ওয়াটার ইনটক্সিটেশন। তাছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জল খেয়ে নেওয়ার ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
ফলে জল খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের একান্ত মনোযোগী হতে হবে। প্রতিদিন কতটা পরিমাণ জল খাওয়া প্রয়োজন, এবং কোন কোন সময় জলপানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ সময় তা নজর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমাদের শরীরের শারীরবৃত্তীয় নানা কাজের জন্য সোডিয়াম খুবই প্রয়োজন। অতিরিক্ত জলপান আমাদের শরীরের সোডিয়ামের ঘনত্বকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে আমাদের শারীরবৃত্তীয় সমস্যা হয়।
ওয়াটার ইনটক্সিকেশন কি?
হঠাৎ করে অনেকটা পরিমাণ জল একসাথে খেয়ে ফেললে শরীরে হঠাৎ করেই উৎকণ্ঠা , শারীরিক সমস্যা, এবং নানান রকম শারিরীক ঝুঁকি বেড়ে যায়। একেই ওয়াটার ইনটক্সিকেশন বলা হয়। অর্থাৎ আমাদের প্রাণ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় জল আমাদের শরীরের বিষের কাজ করে।
প্রতিটা জিনিসেরই নিজস্ব কিছু গুণাগুণ এবং প্রতিক্রিয়া থাকে। শরীরের সব থেকে প্রয়োজনীয় জল, সেই জলকে যদি আমরা সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে না পান করি তবে সেটিও আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক সমস্যা তৈরি করে। ‘ওয়াটার ইনটক্সিকেশন’ কে সহজ ভাষায় ওয়াটার পয়জনিং ও বলে।
একসাথে তাড়াহুড়ো করে অনেকটা জল খেয়ে নিলে আমাদের শরীরে সোডিয়ামের ঘনত্ব কমে যায়। ফলে ইলেক্টলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়। যার ফলে আমাদের শরীরে নানা রকম উৎকণ্ঠা, গা বমি বমি ভাব, এমনকি অতিরিক্ত জল একসাথে খাওয়ার ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
কতটা পরিমাণ জল খাওয়া শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এবং নিরাপদ ?
কতটা জল খাওয়ার প্রয়োজনীয়তার থেকে বড়ো হলো, জলপানের সঠিক সময় নির্বাচন করা। জলপানের সব থেকে সুষম সময় হলো, দিনের বেলা। দিনের বেলা আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় জল গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে পারি। কিন্তু বিকেল বা সন্ধ্যার পর সেই জলপান কমাতে হবে অর্থাৎ দুপুরের পর থেকে যত বিকেল গড়াবে তত জল বা অন্যান্য পানীয়র পানের পরিমাণ কমাতে হবে। কে, কি পরিমাণ জল গ্রহণ করবে সেটি সেই ব্যক্তির ওজন, শারীরিক কাজকর্ম, তার অ্যাকটিভিটি উপর অনেকটাই নির্ভর করে। তাই এই সব দিকে লক্ষ্য রেখেই জল গ্রহণ করতে হবে। কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে দিনে ২-৩ লিটার জল পান করা যেতেই পারে। তবে ১ ঘণ্টায় ১ লিটারের বেশি জল পান বিপদজ্জনক হতে পারে।
এই ধরনের বিপদ এড়াতে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার ?
এই গরমে প্রচুর ঘাম হচ্ছে, সেক্ষেত্রে বেশি করে জলপান করতেই পারেন। কারণ ঘামের মাধ্যমে দেহের অতিরিক্ত জল বাইরে বেরিয়ে যায়। এক্ষেত্রে বাড়ে বাড়ে জলপান করা দরকার। আবহাওয়া শীতল আছে, এবং অনেকটা জলপান করেছেন, তখন জলপানের পরিমাণটা একটু কমিয়ে দিন। খুব কায়িক পরিশ্রম করছেন, শীতল আবহাওয়ার মধ্যেও ঘেমে যাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে জলপানের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
আপনার পস্রাবের রং দেখেও জল খাওয়ার পরিমান ঠিক করতে পারেন। যদি ঘন ঘন বাথরুম(পস্রাব) হয় এবং বাথরুমের রং সাদা হয় তাহলে একটু কম জল খেলেই চলবে। কিন্তু যদি আপনার পস্রাবের পরিমাণ কম এবং গাঢ় হলুদ রঙের হচ্ছে, সেক্ষেত্রে জল খাওয়ার পরিমান বাড়ান। শরীরে জলের ঘাটতির ফলেই পস্রাবের রং হলুদ এবং পরিমাণেরও কমতি ঘটে। আরো অন্যান্য সমস্যার জন্যও পস্রাবের রং হলুদ হয়। তবে যদি বেশি জলপান করে, কিংবা শরীর ঠাণ্ডা করেও পস্রাবের রঙের পরিমাণের বদল না ঘটে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যাদের দীর্ঘদিনের কিডনির সমস্যা, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ মতন নিয়মমাফিক ও পরিমাণমাফিক জলগ্রহণ করুন।
জল খাওয়া শরীর, মন, এমনকি ত্বকের জন্য খুবই ভালো। এই ভালো কথা মাথায় আসতে আমরা ভাবি, খুব বেশি জল খেয়ে নিলে বোধহয় আমাদের শরীর, ত্বক আরো সুন্দর হবে। সাবধান, এমন ভুল করতে যাবেন না। জল অবশ্যই ত্বক শরীরের উপকারী, কারণ আমাদের ভিতর থেকে টক্সিক পদার্থকে অপসারণ করে, আমাদের ইনার বিউটি দেয়। কিন্তু সেটা পরিমাণ মতন পান করুন। অল্প সময়ে খুব বেশি পান করতে যাবেন না। একটু বেশি সময় গ্যাপ দিয়ে পরিমাণ মতন আপনার শারিরীক সুবিধা বুঝে পান করুন। জল খেতে খেতে , গা বমি ভাব লাগকে তখনই জলপান বন্ধ করুন। আপনার ওজন, বয়স ও শারীরিক কর্মশক্তি উপর নির্ভর করে জলপান করুন।
Discussion about this post