বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিনিয়ত নাটকীয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে বিএনপি নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের বিপরীতে অবস্থান করে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল, সেই বিএনপির তারেক রহমানের সঙ্গে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনুস বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচনের সময় নিয়ে নিজের বসে এনেছেন বিএনপি নেতৃত্বকে। ফলে বিএনপি’র মধ্যে এই বৈঠকের পর থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ততা। অন্যদিকে এই অন্তবর্তী সরকারের জন্ম লগ্ন থেকে যে দলকে পাশে পেয়েছে অন্তর্ভুক্তি সরকার, সেই দল এবার উল্টো পথে হাঁটছে! আর সরকার ঘনিষ্ঠ সেই দলটি বাংলাদেশ জামায়াত ই ইসলামী। আবার প্রধান উপদেষ্টার ছাত্র সমন্বয়দের রাজনৈতিক দল এনসিপি তাদের অবস্থান নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ একদিকে বিভ্রান্ত বিএনপি অন্যদিকে বিব্রত এনসিপি।
জানা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনের সাথে সমঝোতায় আসার পর থেকে, অন্তর্বর্তী সরকার ঘনিষ্ঠ জামাত তারা নতুন করে নিজেদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তৈরি করছে। কারণ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ঐক্যমত কমিশনের বৈঠক ত্যাগ করেছে জামাত। ঐক্যমত কমিশনের এই বৈঠকে ৩০ টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো তবে অন্যান্য সমস্ত দলগুলি এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করলেও বৈঠকের উপস্থিত থাকতে দেখা গেল না জামাতকে। মনে করা হচ্ছে বৈঠকের এই অনুপস্থিতি সরকারের নির্বাচন প্রসঙ্গে সমঝোতার বিরুদ্ধে এক প্রচ্ছন্ন প্রতিবাদ দলটির। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে সরকারের সঙ্গে জামাতের বিভেদ অনিবার্য। কিন্তু অন্তর্ভুক্তির সরকারের শুরু থেকে যে জামাতে ইসলামে সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং সরকারের দ্বারা অনেকাংশেই মাথা তুলে দাঁড়ালো যে দল সেই দল সরকারের বিপরীতে গেলে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেবে তা নিয়ে উঠে আসছে বিরাট এক প্রশ্ন।
তবে কি দেশের নির্বাচনের পূর্বেই সরকার ও জামাতের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসবে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে জামাতের সম্পর্কের এই অবনতির কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে মহম্মদ ইউনূসের। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়েছে জামাত। জামাত ই ইসলামীর তরফে বলা হচ্ছে, সরকার পক্ষপাতিত্ব করছে। সরকারের নিরপেক্ষতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। আর এই পক্ষপাতিত্বকে সমর্থন না জানাতেই ঐক্যমত কমিশনের বৈঠক প্রত্যাহার করেছে জামাত ই ইসলামী। বাংলাদেশের একটিদলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের দিনক্ষণ স্থির করায় সরকারের অবস্থান নিযেও উঠেছে প্রশ্ন। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলেছে।কোনভাবেই বিএনপির পক্ষ নিয়ে পক্ষীপাতিত্ব করছেনা।
অন্যদিকে সরকার বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে পক্ষপাতিত্ব নিয়ে যখন বিস্তার আলোচনা চলছে তখন নির্বাচন নিয়ে সরকার কতটা চাপে পড়ছে তা নিয়ে হচ্ছে নানা বিধ জল্পনা। আবার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বিচার সম্পন্ন হয়নি। বিচার কার্যক্রম চলছে। ফলে বিচার সম্পন্ন না হলে সেই সরকারকে কিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন কারণ ইতিমধ্যে জাতিসংঘ ইউটার্ন নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ আওয়ামীলিগের পক্ষে যেতে এখন দেখা যাচ্ছে জাতিসংঘকে। ফলে সরকারের নতুন মাথা ব্যথার কারণ জাতিসংঘ। অর্থাৎ একইসঙ্গে জাতিসংঘের সহায়তা ও জামাতের সহযোগিতা সবটাই যখন হারাতে বসেছে মোহাম্মাদ তখন রাষ্ট্রপরিচালনায় তার পক্ষে থাকার তালিকায় কাদের কাদের পাওয়া যাবে সেটা ভাবতেই এখন রাতের ঘুম উড়েছে অন্তর্ভুক্তি সরকারের। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা ঘিরেই তুমুল চর্চা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
Discussion about this post