“পশ্চিমবঙ্গকে মোদির শাসনমুক্ত করে স্বাধীন ঘোষণা করুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়”। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে এমনই আবেদন করলেন বাংলাদেশের কট্টরপন্থী এক মৌলবাদী নেতা। যিনি আল কায়দীপন্থী ইসলামী দল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান। এই সংগঠনকে ভারত সরকার বহুদিন আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তিনি জশিমুদ্দিন রহমানি হাফি। যিনি শেখ হাসিনার আমলে দীর্ঘদিন জেলবন্দী ছিলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাঁকে মুক্তি দিয়েছে। যা নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে বাংলাজুড়ে। একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই খবর প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতন এবং তদারকি সরকার গঠনের পর থেকেই সিদূঁরে মেঘ দেখছে ভারত সরকার। কারণ, মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার সে দেশের জেলগুলিতে আটকে থাকা জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের ছেড়ে দেওয়া শুরু করে। পাশাপাশি গোলমালের মধ্যে বেশ কয়েকজন জঙ্গি জেল ভেঙেও পালিয়েছিল। কোনও ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সেনা অথবা পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেয়নি। এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একের পর এক কট্টরপন্থী মৌলবাদী নেতাদের মুক্তি দিয়ে চলেছে। শেখ হাসিনার আমলে যাদের গ্রেফতার করে কারাগারের অন্তরালে পাঠানো হয়েছিল।
এদের মধ্যে অন্যতম আনসারুল্লা বাংলা টিম বা এবিটি। অভিযোগ, এই সংগঠনটি বিশ্বত্রাস জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশের শাখা সংগঠন হিসেবে কাজ করে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এই সংগঠন বেশ কয়েকটি নৃশংশ হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ভারত সরকার এই সংগঠনকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ সরকারও এই সংগঠনের কার্যকলাপ নিয়ে চিন্তিত ছিল। এক বাংলাদেশি ব্লগারকে নৃশংশভাবে হত্যা, ব্যাঙ্ক ডাকাতি ও গ্রেনেড হামলায় ৬ জনের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা সরকার আনসারুল্লা বাংলা টিম বা এবিটি-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ২০১৫ সালের মে মাসে। সেই সময়ই আনসারুল্লা প্রধান জশিমুদ্দিন রহমানি হাফিকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে সেই জঙ্গিনেতাকে মুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এহেন কট্টরপন্থী জঙ্গি সংগঠনের নেতা জশিমুদ্দিন রহমানি হাফির একটি ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কোনও এক হাসপাতালের বসে বিবৃতি দিচ্ছেন জশিমুদ্দিন রহমানি হাফি। ওই ভিডিওতে যেমন তাঁকে শিলিগুড়ি করিডর নিয়েও হুমকি দিতে শোনা যায়, তেমনই কাশ্মীর নিয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতকে। তাঁর বক্তব্য, আমি ভারতকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। বাংলাদেশ সিকিম বা ভুটানের মতো নয়। এটা ১৮ কোটি মুসলিমের দেশ। তোমরা যদি বাংলাদেশের দিকে একটি পাও বাড়াও, তাহলে আমরা চিনকে বলব মুরগির গলা (শিলিগুড়ি করিডর) টিপে ধরতে।
রহমানি আরও বলেছেন, কাশ্মীরকে বলছি আজাদির লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হও। কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তোমাদের সাহায্য করবে। আমরাও আজাদ কাশ্মীর গড়তে কাজ করব। এখানেই শেষ নয়, পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে তাঁর মন্তব্য ছিল সবচেয়ে বিস্ফোরক। রহমানির দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছি, মোদীর শাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করুন। স্বাধীনতা ঘোষণা করুন। শিখদের বলছি, তোমাদেরও সময় এসে গিয়েছে। খলিস্তান গড়তে এগিয়ে এসো। ভারতের সব প্রদেশকে ডাক দিচ্ছি স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করো। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে বসে কট্টরপন্থী এই জঙ্গিনেতা ভারতকে টুকরো টুকরো করার পরিকল্পনা তৈরি করছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বরাবরই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এক গণ অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে হাসিনার পতন হয়েছে। সেখানে এখন এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের সরকারের সম্পর্ক তলানিতে এসে পৌঁছেছে। মূল কারণ অবশ্যই শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দেওয়া। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তদারকি সরকারে হাসিনা বিরোধী বিএনপি এবং জামাতের মতো দলের প্রভাব বেশি। ফলে ভারতবিরোধীতাও বারবার সামনে চলে আসছে। ভারতে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাদের জেলমুক্তি দেওয়া সবচেয়ে বড় প্রমান। আর সেই নেতাই জেল থেকে বেরিয়ে প্রকাশ্যে ভারতকে হুমকি দিতে শুরু করেছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেও প্রচ্ছন্ন হুমকি দিচ্ছেন তাঁর কথা মেনে চলতে। যা যথেষ্টই চিন্তার কারণ। এখন দেখার নয়া দিল্লি কি পদক্ষেপ নেয়।
Discussion about this post